ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ভাঙনে গঙ্গাচড়ার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিনবিনার চর 

রংপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪১, ৩০ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৬:৪২, ৩০ আগস্ট ২০২১
ভাঙনে গঙ্গাচড়ার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিনবিনার চর 

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল আর অনরত বৃষ্টিতে দফায় দফায় পানি বাড়ায় তিস্তা নদীতে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। আর এতে হুমকির মুখে পড়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তার তীরবর্তী তিনটি ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম।

নদীটি ইতোমধ্যে কোলকোন্দ ইউনিয়নের পূর্ব বিনবিনার চর গ্রামটির সবকিছুই গিলে ফেলেছে। চলতি বন্যা মৌসুমে পূর্ব বিনবিনা চড়ের ৫০ থেকে ৬০টি পরিবারের বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামটি।

এছাড়াও লক্ষীটারীর পশ্চিম ইচলীসহ উপজেলার প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়িসহ হেক্টর হেক্টর ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, মসজিদ নদীতে বিলীন হয়েছে। দিনের পর দিন উজানের পানির স্রোতে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। 

গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের পূর্ব বিনবিনা চর থেকে লক্ষীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলী সংযোগ বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। এতে বাগেরহাট বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ও আশ্রয়নে পানি ঢুকে পড়ে। এসময় বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগে বালু ভরাট করে ভাঙন রোধে চেষ্টা চালায়। কিন্তু অনেক স্থানে বালুর ব্যাগ না ফেলায় সেসব স্থানে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়। এতে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়সারা আশ্বাসে প্রতি বছর দুর্ভোগ বাড়ছে বলে দাবি ভাঙন কবলিত মানুষের।

ইতোপূর্বে ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে বিনবিনার চরে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নির্মিত বাঁধটি ভেঙে পূর্ব বিনবিনার চরের একমাত্র মসজিদটিও বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে লক্ষীটারী ইউনিয়নের কেল্লারপাড় চরে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত উপবাঁধটিও ভেঙে যেতে বসেছে। কয়েক দিনের ভাঙনে কোলকোন্দ ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলীর ২৭টি পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। চরম হুমকির মুখে পড়েছে দুটি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, ব্রিজ, মসজিদ ও ফসলি জমি।

উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি, শংকরদহ, বাগেরহাট আশ্রয়ন, পূর্ব ইচলী, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, পূর্ব বিনবিনা চর, নোহালীর মিনার বাজার, কচুয়াচর, চর নোহালী, বাগডহরা এলাকার বিভিন্ন স্থানেও ভাঙন শুরু হয়েছে। 

সোমবার (৩০ আগস্ট) গঙ্গাচড়া উপজেলার বিনবিনার চর এলাকায় সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী জানান, এসব এলাকায় আগে তেমন নদী ভাঙন ছিল না। তিস্তার গতি পরিবর্তন হওয়ায় এখন এসব এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। তারা ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। 

লক্ষীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে অধিকাংশ এলাকা নদীর পেটে চলে যাবে। ঘরবাড়ি, জমি-জমা হারিয়ে অসংখ্য পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়বে। 

কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু বলেন, তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে ইতোমধ্যে পূর্ব বিনবিনা চরে ৫০/৬০টি পরিবারের বাড়িঘর বিলীন হয়ে উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামটি। এখানে অসংখ্য ফসলি জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে। বর্তমানে ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করছে এবং প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা ভাঙছে। এখনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দাবি ভাঙন কবলিত মানুষের।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, এবারের বন্যায় উপজেলার অনেক পরিবারের বাড়িঘর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। অনেকে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। নতুন করে এলাকায় ভাঙন রোধে জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।

আমিরুল/মাহি 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়