লোডশেডিংয়ে নাকাল রংপুরবাসী
রংপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
রংপুরে গত এক সপ্তাহ ধরে শেডিংয়ের কবলে পড়ে জন জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ার কারণেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
তবে কর্তৃপক্ষের দাবি এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগতে পারে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) এর অধীনে রংপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এই নগরীতে প্রতিদিনের বিদ্যুৎ চাহিদা ১৫০ মেগাওয়াট।
নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ বিতরণ ইউনিট-১-এর আওতায় শাপলা ফিডারে নগরীর ২০টি মহল্লা ও অধিকাংশ শপিং মল, মার্কেটসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার গ্রাহক সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি।
এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই লোড শেডিংয়ের যাঁতাকলে জনজীবন নাকাল হচ্ছে নগরবাসীর। কখনো সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কখনো বা সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অথবা সারা রাত ধরে চলছে লোডশেডিং। ফলে আশ্বিন মাসের গরম আর প্রচন্ড তাপদাহে নগরবাসীর জনজীবনে নেমেছে অসহনীয় দুর্ভোগ। এতে ক্ষতির মুখে পরেছে ব্যবসায়ীসহ শিক্ষার্থীরাও।
এছাড়া বিদ্যুতের অভাবে নগরীর বড় শপিং মল ও মার্কেট গুলো বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। বিদ্যুতের অব্যাহত লোড শেডিং থেকে বাঁচতে গত শনিবার বিকালে বিক্ষুব্দ জনতা শাপলা চত্বর এলাকায় অবস্থিত নেসকোর নির্বাহি প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ভীড় জমায় ও প্রতিবাদ করেন।
এর একদিন পরেই কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে নগরে প্রচার করে যে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।
তবে সাধারণ মানুষ বলছে এটা বিদ্যুৎ বিভাগের গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না। বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার সচল করতে বিদ্যুৎ বিভাগের গড়িমসি সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছে।
নগরীর জামাল মার্কেট, সালেক মার্কেট ও সুপার মার্কেট ঘুরে কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, দীর্ঘদিন সমস্যা থাকলেও এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নগরে বিদ্যুতের লুকোচুরি চরমে উঠেছে। কখন বিদ্যুৎ আসে, কখন যায় তার ঠিক নেই। আবার কম ভোল্টেজের কারণে বৈদ্যুতিক সামগ্রীও নষ্ট হচ্ছে। গরমে ঘরে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে থাকা দায়। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যেও দেখা দিয়েছে মন্দা। মার্কেটগুলোতে কমছে ক্রেতার উপস্থিতিও।
নেসকোর অফিস সূত্রে জানা যায়, রংপুরে নেসকোর তিনটি ইউনিট আছে। প্রতিটি ইউনিটে দুটি করে পাওয়ার ট্রান্সমিটার রয়েছে। গত শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লালবাগ উপকেন্দ্রের ৩৩/১১ কেভি ১০/১৩ এমভিএ’র একটি ট্রান্সমিটার বজ্রপাতের কারণে বিকল হয়। বিবিবি-১, নেসকো লি. রংপুর দুটি ১০/১৩ এমভিএ পাওয়ার ট্রান্সফরমার দ্বারা প্রায় ৪৩ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে।
একটি ১০/১৩ পাওয়ার ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ায় প্রায় ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর এ ঘাটতি একটি ট্রান্সফরমার দিয়ে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখার চেষ্টা তাদের।
রংপুর বিদ্যুৎ বিভাগ নেসকো'র প্রধান প্রকৌশলী শাহদৎ হোসেন জানান, বিতরন বিভাগের ইউনিট-১-এর সঞ্চালন লাইনের বড় মাপের একটি ট্রান্সফরমা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সাময়িক এই সমস্যার সুষ্টি হয়েছে। কুড়িগ্রাম থেকে নিয়ে আসা ট্রান্সফরমাটি প্রতি স্থাপনের কাজ করা হয়েছে। বিকল ট্রান্সফারমাটি অপসারণ করা হয়েছে।
নতুন ট্রান্সফরমারটি স্থাপন করা হয়েছে। তবে ট্রান্সফরমার চালু করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং, বিপদজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে দু-তিন দিনের মধ্যে পাওয়ার ট্রান্সফরমারটি চালু করা হবে বলে আশা করছি।
আমিরুল/মাসুদ
আরো পড়ুন