ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

এবার কক্সবাজারে দুর্গোৎসব হবে ১৪৯ পূজামণ্ডপে

তারেকুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১০, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১১:৩৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

শারদীয় দুর্গোৎসবের হাওয়া লেগেছে সাগর সৈকতের কক্সবাজারেও। এখানের মন্দিরগুলোতে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এ বছর ১১ অক্টোবর থেকে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠিকতা। চলবে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত।

বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকরা। এর মধ্যে খড়, মাটি আর দো-আঁশ মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা আয়োজন করা হবে।

কক্সবাজার পৌর পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি বেন্টু দাশ বলেন, এ বছর কক্সবাজার পৌর এলাকার ১১ মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া জেলার প্রধান কেন্দ্র হচ্ছে কক্সবাজার পৌর এলাকা। এখানে ভিআইপি অতিথিরা এসে প্রতিমা পরিদর্শন করবেন এবং সবচেয়ে বড় প্রতিমা এখান থেকে বিসর্জন দেয়া হবে। সেজন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। 

তিনি বলেন, ৬ অক্টোবর মহালয়ার শুভ আগমন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে কক্সবাজার পৌর পূজা উদযাপন পরিষদ। ওইদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চন্ডীপাঠ, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-আলোচনা সভা, দরিদ্র জনগোষ্ঠির মাঝে বস্ত্র বিতরণ এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য 'শুভ্রার প্রদর্শনী হবে।"

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এবার কক্সবাজার জেলায় দুর্গোৎসব হবে ১৪৯ পূজামণ্ডপে। দুর্গাপূজা এবং ঘটপূজার জন্য ৩০২টি প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। এরমধ্যে সদর এবং ঈদগাঁও উপজেলায় প্রতিমাপূজার জন্য ৩৪ আর ঘটপূজার জন্য ১৮টি। কক্সবাজার পৌরসভায় প্রতিমাপূজার জন্য ১১টি, ঘটপূজার জন্য  ৯টি, রামু উপজেলায় প্রতিমাপূজার জন্য ২২টি এবং ঘটপূজার জন্য ১০ টি প্রতিমা তৈরি করা হচ্ছে।

এছাড়া চকরিয়া উপজেলায় প্রতিমাপূজার জন্য ৪৮ এবং ঘটপূজার জন্য ৪৩টি। পেকুয়ায় প্রতিমাপূজার জন্য ৬, ঘটপূজার জন্য ৩টি। কুতুবদিয়া উপজেলায় প্রতিমাপূজার জন্য ১৩, ঘটপূজার জন্য ৩২টি। মহেশখালী উপজেলায় প্রতিমাপূজার জন্য ১টি, ঘটপূজার জন্য ৩০টি। উখিয়া উপজেলায় প্রতিমাপূজার জন্য ৭ আর ঘটপূজার জন্য ৮টি। টেকনাফ উপজেলায় শুধুমাত্র প্রতিমাপূজার ৬টি। উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১টি মাত্র প্রতিমা তৈরী হচ্ছে।

কক্সবাজারের স্বরসতী মন্দিরগুলোতে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ।  এরই মধ্যে আনন্দ আমেজের ছোঁয়া লেগে গেছে হিন্দুপাড়ায়। ক'দিন পরেই ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি আর আরতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে পাড়া-মহল্লা থেকে গ্রাম।

মন্দিরে খড় ও মাটি দিয়ে পরম যত্নে গড়ে তুলছে প্রতিমা। এখন চলছে দো-আঁশ মাটির কাজ। আর এসব প্রতিমা তৈরিতে দম ফেলার ফুসরত নেই প্রতিমা শিল্পীদের। এরপর রঙ তুলির টানে প্রতিমাগুলো ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন প্রতিমা শিল্পীরা। দেবী মা দুর্গা তার সঙ্গে বিদ্যার দেবী স্বরসতী, ধন সম্পদের দেবী লক্ষ্মী এবং তার সঙ্গে দেবতা কার্তিক ও গনেশসহ নানা দেব-দেবীর প্রতিমার রূপকে ফুটিয়ে তুলবেন নিপুণ হাতের ছোঁয়ায়।

প্রতিমা শিল্পীরা চাহিদার তুলায় মজুরি কম পেলেও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রেখেছন তারা।

কথা হয় প্রতিমা শিল্পী বাবুল ভট্টাচার্যের সাথে। তিনি বলেন, আমার পক্ষ থেকে ৬-৭ জন শিল্পী প্রতিমা তৈরির কাজ করে। তারা নিজেদের সেরাটাই দিয়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত।

আরেক প্রতিমা শিল্পী মিল্টন ভট্টাচার্য বলেন, আমার বাবা, ভাই মিলে প্রতিমা তৈরি ও সাজানোর কাজ করি। আমাদের জীবিকার উৎস এটি। এ বছর প্রতিমা তৈরির অর্ডার পেয়েছি। এক এক করে তৈরি যাচ্ছি। কক্সবাজার স্বরসতী মন্দিরে আমরা ১৬-১৮ জন শিল্পী কাজ করছি।'

কক্সবাজার স্বরসতী পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, প্রতিমা বছর বিভিন্ন পূজার প্রতিমা তৈরী করে যান মৃৎশিল্পীরা। কিন্তু তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়না। তারা তাদের ন্যায্যমূল্য পায় না। আমি দিলে কি হবে অন্যান্য যারা আছে সকলকেই তো তাদের অধিকার ও ন্যায্যমূল্য দিতে হবে। এতো পরিশ্রমের পর প্রতিমা তৈরি করে যে মজুরি পান তা দিয়ে জীবন যাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে গেলেও তারপরেও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রাখছেন তারা।

সুজন বলেন, ১১ অক্টোবর থেকে পূজা শুরু হচ্ছে। শহরের ৮টি প্রতিমা তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। ১০ অক্টোবরের আগেই প্রতিমা তৈরী ও সাজানোর কাজ শেষ হবে।

যারা প্রতিমা দেখতে আসবেন তাদের জন্য তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মনে চলার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার/টিপু

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়