ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যা: রকিকে নির্দোষ দাবি পরিবারের

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৪, ৩০ নভেম্বর ২০২১  
কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যা: রকিকে নির্দোষ দাবি পরিবারের

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল (৫০) ও আওয়ামী লীগ কর্মী হরিপদ সাহা (৫৫) হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি মো. আশিকুর রহমান রকিকে ‘নির্দোষ’ দাবি করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। 

রকিকে গত শনিবার (২৭ নভেম্বর) লালমনিরহাটের চণ্ডীবাজার থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। 

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) কুমিল্লা নগরীর বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রকির স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। এ সময় রকির বাবা আনোয়ার হোসেন, মা রানু বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের বাসা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তেলিকোনা এলাকায়।

বক্তব্যে রকির স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমার স্বামী আশিকুর রহমান রকি নগরীর রাজগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী। সেখানে রকি স্টোর নামে তার কসমেটিক্সের দোকান রয়েছে। কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেল হত্যার ঘটনায় আমরাও শোকাহত। আমরা হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। কিন্তু আমরা সকলেই অবাক হয়েছি এই হত্যা মামলায় আমার স্বামীকে আসামি করাতে। আমার শ্বশুরের পরিবার বা আমার স্বামীর সঙ্গে নিহত সৈয়দ মো. সোহেলের কোনো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিরোধ নেই। ঘটনার সময় আমার স্বামী তার বাবাসহ রাজগঞ্জ বাজারে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ছিলেন। সেখানকার ব্যবসায়ীরা সকলে তাকে বাজারে দেখেছেন। এছাড়াও বাজারের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যায়। আমরা অসহায় মানুষ, একটি মহল ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আমাদের হয়রানি করছে।’ 

জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমার স্বামীকে আসামি করায় র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এই সুযোগে একটি মহল আমাদের এলাকা ছাড়া করেছে। সোমবার (২৯ নভেম্বর) আমাদের ঘর বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। আমরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় আমার শাশুড়ি লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমি প্রশাসনের কাছে আমার স্বামীর বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করি। আর প্রকৃত হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’ 

রকির বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা গত চার বছর ধরে ব্যবসা করি। বাজারের শত শত মানুষ দেখেছে ঘটনার দিন এবং ঘটনার পরদিনও রকি বাজারে দোকানে ছিলো। মামলার খবর শুনে ভয়ে লালমনিরহাটে পালিয়ে যায়। শুধু আমাদের হয়রানি করার জন্যই তাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। রকি আমার একমাত্র ছেলে, আমি তার মুক্তি চাই।’

রকির মা রানু বেগম বলেন, ‘কাউন্সিলর সোহেল আমাদের পরিবারকে খুব মায়া করতেন। আমরাও তাকে সম্মান করতাম। আজ তিনি বেঁচে থাকলে আমাদের এতটা হয়রানি হতে হতো না।’ 

রকির বোন সোনিয়া আক্তার নিশি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মাত্র সাড়ে ৫ মাস বয়সী কন্যা শিশু রয়েছে। তার স্ত্রী এখন দিশেহারা। রকির সঙ্গে কাউন্সিলর সোহেল ও মামলার বাদী রুমন ভাইয়ের অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু এরপরও অন্যায়ভাবে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।’ এ সময় মামলার বাদী রুমনের সঙ্গে থাকা রকির একাধিক ছবি দেখান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন বলেন, ‘পুলিশ মামলার তদন্ত করছে। তদন্তে বের হবে রকি দোষী নাকি নির্দোষ। আমি এখন বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাই না।’ 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনওয়ারুল আজিম বলেন, মামলার তদন্তে চলছে। তদন্তে সকল সত্য বেরিয়ে আসবে।

গত ২২ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে নগরীর পাথরিয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজে কাউন্সিলর কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ওই দুইজন। কাউন্সিলর সোহেল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। নিহত হরিপদ সাহা নগরীর ১৭নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
 

রহমান/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়