ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কয়রায় রিং বাঁধ ভেঙে ২ গ্রাম প্লাবিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১২, ৬ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ২১:৫৩, ৬ ডিসেম্বর ২০২১
কয়রায় রিং বাঁধ ভেঙে ২ গ্রাম প্লাবিত

খুলনায় গত দুই দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। অবিরাম বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি আবারও কখনও মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।

সোমবার (৬ ডিসেম্বর) নগরীতে লোক চলাচল ছিলো খুবই কম। যানবাহনও চলাচল করেছে কম। গুরুত্বপূর্ণ কাজ না থাকলে কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। দোকানপাটে মানুষের উপস্থিতি তেমন-একটা চোখে পড়েনি।

গত কিছু দিন ধরে যানবাহনের ভাড়া বেড়েছে। তার ওপর বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে রিকশা, ইজিবাইক ও মাহিন্দ্রচালকরা ভাড়া হেঁকেছেন ইচ্ছেমতো। এতে অফিসগামীসহ সাধারণ যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। অবিরাম বৃষ্টিতে খুলনার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে, শাকবাড়িয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরী ও হরিহারপুর গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই গ্রামের দুই শত পরিবার। ঠিকাদারের গাফিলতিতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পানিবন্দি পারিবারের সদস্যরা। 

বঙ্গোসাগরের সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে শাকবাড়িয়া নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীতে প্রবল স্রোত ও স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত শনিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে হরিহারপুর লঞ্চঘাটের পূর্বপাশ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ পুনরায় ভেঙে যায়। চলতি বছরের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে একইস্থানে ভেঙে প্লাবিত হয়।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন (বোর্ড বিভাগ-২) সূত্র জানায়, জরুরিভিত্তিতে কয়রা উপজেলার পোল্ডার ১৪/১ এর হরিপুর লঞ্চঘাটের পূর্বপাশ থেকে ৪১০ মিটার পর্যন্ত  টিউব দ্বারা রিং বাঁধ ও মাটি দিয়ে স্লোপ নির্মাণ কাজের জন্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে ঠিকাদারের গাফিলতিতে সেই বাঁধ আবার ভেঙে গেছে। 

গাতিরঘেরী গ্রামের ভবেশ মণ্ডল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর প্রায় পাঁচ মাস পানিবন্দি ছিলাম। মাসখানেক আগে বাঁধ হওয়ায় মনে করেছিলাম বিধাতা হয়ত আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন। কিন্তু ঠিকাদারের গাফিলতিতে আবারও বাঁধ ভেঙে আমরা পানিবন্দি হয়ে পড়েছি।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘জানি না এ শনির দশা থেকে আবার কবে মুক্ত হবো।’

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিভাগ-২) উপ-সহকারী প্রকৌশল মশিউল আবেদিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে শাকবাড়িয়া নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট পানি বৃদ্ধ পাওয়ায় হরিহারপুর লঞ্চঘাটের পূর্বপাশে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। ওই স্থানে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া আছে। দ্রুত সময়ের মধ্য ওই এলাকার মানুষকে পানিবন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করা যাবে। 

কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, শাকবাড়িয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গাতিরঘেরী ও হরিহারপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি মানুষের জন্য ইতোমধ্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও ওই এলাকার মানুষের শীত নিবারণের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।

খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত দুইদিন ধরে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত সোমবার (২৯ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে আজ সোমবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর ৩টা পর্যন্ত খুলনায় ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। নিম্নচাপ কেটে গেলে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান তিনি। 
 

নূরুজ্জামান/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়