ঢাকা     বুধবার   ১৫ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩১

বর্ষায় ভোগান্তি বাড়বে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে

রাজবাড়ী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ৩১ মার্চ ২০২২   আপডেট: ১৩:১৯, ৩১ মার্চ ২০২২
বর্ষায় ভোগান্তি বাড়বে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে

দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার খ্যাত রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথ। যাত্রী ও যানবাহনের পারাপারের জন্য ফেরি ঘাটের পাশাপাশি এখানে রয়েছে লঞ্চঘাটও। এই লঞ্চঘাট ব্যবহার করে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী পারাপার হয়ে থাকেন পদ্মা নদী। কিন্তু এই ঘাটের সঙ্গে সংযোগ সড়কের যে সেতু দুটি রয়েছে সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস ধরে। 

বর্তমানে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে বালির জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ী রাস্তা ও উঠা নামার সিড়ি করা হয়েছে। যেটি ব্যবহার করেই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ লঞ্চ টার্মিনালে প্রবেশ করছেন ও বের হচ্ছেন। এই উঁচু নিচু রাস্তা ব্যবহারে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের। সামনে বর্ষা মৌসুমে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে উঠলে ভোগান্তির মাত্রা বাড়বে কয়েকগুন। এমনকি ঘটতে পারে দুর্ঘটনাও। 

দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ম্যানেজার মিলন জানান, ‘দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে প্রতিদিন ১৮-২০টি লঞ্চ চলাচল করে। এসব লঞ্চে কয়েক হাজার যাত্রী পদ্মা নদী পারাপার করেন।’

 বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘাটে যাত্রীদের সুবিধার্থে কাঠ ও লোহার তৈরি আলাদা দুটি ছোট সেতু রয়েছে। কিন্তু গত বর্ষায় নদীভাঙনে সেতু দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে সেতু দুটি। প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও বন্ধ সেতু দুটি মেরামতের তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলেও এ নিয়ে কোনো তৎপরতা নেই বিআইডাব্লিটিএ এর মধ্যে।

গোয়ালন্দ উপজেলার নির্বাহী অফিসার আজিজুল হক বলেন, ‘আমি বিআইডাব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। তারা আমাকে বলছেন লঞ্চঘাটের স্থান পরিবর্তন হবে তাই এই সেতু দুইটি সংস্কার করা হচ্ছে না। তবে, ঈদে যাত্রীদের যাতে ভোগান্তিতে পড়তে না হয় সেজন্য সেতু দুটিকে অস্থায়ীভাবে মেরামত করে অন্তত চলাচলের উপযোগী করার জন্য বলা হয়েছে।’

রাকিবুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আমার বাড়ি সাতক্ষীরা। সাভারে একটা চাকরি করি। ছুটিতে বাড়ি যাবার সময় এই লঞ্চঘাট দিয়ে পারাপার হই। দীর্ঘদিন পর বাড়ি যাচ্ছি। এবার এসে দেখলাম সেতুটি ভাঙ্গা। বড় ব্যাগ নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে উঠতে কষ্ট হচ্ছে। স্ত্রী-সন্তান সঙ্গে থাকলে এই দুর্ভোগ আরো বাড়তো।‘

রশিদ মৃধা নামের এক সত্তরোর্ধ্ব যাত্রী বলেন, ‘গত কয়েকমাসে আগে যখন ঢাকায় যাই তখন দেখলাম ব্রিজটা ভাঙ্গা ছিল। ভাবছিলাম ঠিক করে ফেলবে। কিন্তু এখনো ঠিক করে নাই। এই রাস্তা দিয়ে এই বয়সে উঠা নামা করা খুবই কষ্টকর।’

পায়েল নামের অপর এক যাত্রী বলেন, ‘আমার সঙ্গে ছোট একটি বাচ্চা রয়েছে। এখন ঘাটের এই উঁচুনিচু পথে উঠবো কিভাবে তা নিয়ে চিন্তা করছি। এ পথে নিজের ভারসাম্য রাখায় কঠিন সেখানে কোলে আবার বাচ্চা আছে। বর্ষার সময় তো এই রাস্তা ব্যবহারই করা যাবে না।’

দৌলতদিয়া লঞ্চ টার্মিনালে কর্তব্যরত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএর) ট্রাফিক পরিদর্শক আফতাব হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে কয়েক হাজার যাত্রী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করেন। কাঠের ও লোহার তৈরি সেতু দুটি দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন। সেতু দুটি বন্ধ হওয়াতে যাত্রীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

বিআইডব্লিউটিএর আরিচা অঞ্চলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম বলেন, ‘গত বছর বর্ষায় নদীভাঙনে লঞ্চঘাট ও সেতু দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘাট আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় দৌলতদিয়ায় ছয় কিলোমিটার স্থায়ী কাজ হবে। তাই সেতু দুটি মেরামত করা হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের সময় নদীর পানি বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি বিবেচনা করে যে কোনো একটি ফেরিঘাটকে লঞ্চঘাট হিসেবে ব্যবহার করা হবে।’

সুকান্ত/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়