ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

শেরপুরের শাল গজারি বনে আগুন দিচ্ছে কে?

শেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪০, ২ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ১৮:৫৩, ২ এপ্রিল ২০২২
শেরপুরের শাল গজারি বনে আগুন দিচ্ছে কে?

শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতি, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ি উপজেলার পাহাড়ি বনভূমিতে গত কয়েক বছর ধরেই শুষ্ক মৌসুমে বনের বিভিন্ন অংশে আগুন দিচ্ছে একটি অসাধু চক্র। এতে পুড়ছে গাছের চারা, নষ্ট হচ্ছে বড়গাছ, বিপন্ন হচ্ছে পাখিসহ উপকারী কীটপতঙ্গ। বনবিভাগ যখন আগুন নেভাতে ব্যস্ত সেই সুযোগে বনের মূল্যবান গাছ কেটে বন উজাড় করছে চক্রটি। 

শাল বাগানের জন্য সুখ্যাতি আছে শেরপুরের সীমান্তবর্তী এই তিন উপজেলার। এখানকার বিস্তৃর্ণ বনভূমিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র ও অভয়ারণ্য। কিন্তু পুরনো বন ধ্বংস করে রোপণ করা হচ্ছে ইউক্যালিপটাস-আকাশমনি গাছের চারা। অভিযোগ এসব চারা রোপণের জন্য আগুন দেওয়া হয় বনভূমিতে। এতে মরে যাচ্ছে অনেক বড়গাছ। সেই গাছ রাতারাতি কেটেও নিচ্ছে দুষ্কৃতিকারীরা। 

স্থানীয় অধিবাসী ও বন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। পাহাড়ি অধ্যুষিত নৃগোষ্ঠীর অনেকে অভিযোগ করে বলেন, পর্যটকরা বেড়াতে এসে অনেক সময় গাছ থেকে ঝরে পড়ে পাতায় আগুন দেয়। বেখেয়ালে এভাবেই আগুনের সূত্রপাত। অপর দিকে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন- স্থানীয় অধিবাসীরা এ কাজের সঙ্গে জড়িত।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে বেড়াতে আসা মো. আব্দুল জব্বারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, শেরপুর জেলার পাহাড়ি এলাকার পরিবেশ মনোমুগ্ধকর। যে কারণে আমরা এখানে ঘুরতে আসি। আমরা সব সময় চাই এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় থাকুক। পর্যটকরা বনে আগুন লাগাবে এই কথা হাস্যকর। 

এদিকে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বন রক্ষায় কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি গাছ দেখভালের বিনিময়ে তখন টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও সেই অর্থ তারা পাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক বলেন, সমতলের পাহাড়গুলো সবুজ ঘাসে বেষ্টিত থাকায় ধানের পাশাপাশি আমরা গরু লালন পালন করি। বনের হাজার হাজার হেক্টর জমি আগুনে পুড়ে উজাড় হয়ে যাওয়ায় আমাদের গো খাদ্যের সংকট তৈরি হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে রাংটিয়া রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, যে অংশগুলোতে গাছ পুড়ে গেছে সেগুলো পুনরায় লাগানো হবে। তার মানে রিপেয়ারিং করার সুযোগ আছে। তবে স্থানীয় মানুষরাই এ আগুন লাগাচ্ছে বলে আমরা জেনেছি। কেন স্থানীয় মানুষ আগুন দেবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব অসাধু মানুষ আমাদের নিয়মের মধ্যে থেকে চলতে পারছে না এবং বন থেকে বাড়তি সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে না তারাই কাজটি করছে। এছাড়া একসঙ্গে বৃহত্তর এলাকায় আগুন লাগলে বনের সামান্য জনবল নিয়ে আগুন নেভাতে আমরা হিমশিম খাই। 

আগুনের ক্ষতিকর দিক বর্ণনা করে এর আগে দুবার সতর্কতামূলক মাইকিং করা হয়েছে। তবে এই প্রচার-প্রচারণা আরো বৃহৎ পরিসরে করা দরকার বলেও জানান মকরুল ইসলাম। 

শাল-গজারি বন রক্ষায় ব্যর্থতার কারণ হিসেবে ‘লোকবল কম’ যুক্তি দেখিয়ে শেরপুর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আবু ইউসুফ বলেন, মূল বিষয়টি হলো প্রতিটি বিট অফিসে যে পরিমাণ লোকবল আছে তা দিয়ে শালবনের আগুন নেভানো দুঃসাধ্য কাজ।

তারিকুল/তারা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়