সুগন্ধায় লঞ্চে আগুন: নিখোঁজদের পরিবারে ঈদ বেদনাসিক্ত
ইমরান হোসেন, বরগুনা || রাইজিংবিডি.কম
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে নিহত অনেকের পরিচয় ৬ সংখ্যার জিডি নাম্বার। ২১ কবরে ২৩ জনের লাশ, অথচ প্রশাসনের তালিকায় নিখোঁজের সংখ্যা ৩০।
সবাই যখন ঈদের আনন্দে বিভোর, বরগুনা সদরের মানিকখালী এলাকার আব্দুল মোতালেব শরীফ তখন পোটকাখালী গণকবরে এসে দাঁড়িয়ে আছেন। মোতালেব জানেন না, তার ভাই আব্দুল হাকিম, ভাইবউ পাখি বেগম ও তাদের আড়াই বছরের সন্তান নাসিরুল্লাহর কবর কোনগুলো? মোতালেব এটাও নিশ্চিত নন যে, আদৌ এখানে তার স্বজনদের লাশ আছে কি না।
আব্দুল মোতালেব শরীফ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটা দিন বেদনাসিক্ত। আমরা জানি, এখানে ২৩ জনের মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে। কিন্তু, আমরা জানি না, এর মধ্যে কোন কবর তিনটি আমার ভাই ও তার স্ত্রী-সন্তানের। মৃতদেহগুলো এমনভাবে পুড়েছিল যে, চেনার কোনো উপায় ছিল না।’
বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের মোল্লার হোড়া গ্রামের শিমুল সর্দার জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিন ঢাকায় বাস করতেন। গত বছরের শেষের দিকে গ্রামের বাড়িতে নতুন পাকা ঘর তুলতে শুরু করেন শিমুল। সেই ঘর দেখতে ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে ফিরছিলেন সুমনের স্ত্রী তাসলিমা, দুই মেয়ে মীম ও তানিসা এবং স্ত্রীর ভাইয়ের ছেলে জুনায়েদ। কিন্তু সে স্বপ্ন আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় অভিযান-১০ লঞ্চের অগ্নিকাণ্ডে। ওই ঘটনায় চারজনই মারা যান। এখনো সন্ধান মেলেনি তাদের। তাই, একদিকে স্বজন হারানোর শোক, অন্যদিকে চার মাসেও লাশের সন্ধান না পাওয়ার হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে পরিবারের মাঝে। ঈদের আনন্দে যখন সবার মুখে হাসি, তখন এসব পরিবারের সদস্যদের মুখ মলিন, চোখ পানিতে ভেজা।
শিমুলের চাচা মো. লোকমান হোসেন বলেন, ‘একটি পরিবারের চারটি মানুষ পুড়ে মারা গেল। চার মাস শেষেও সরকার তাদের মৃতদেহ শনাক্ত করে দিতে পারল না। এই ঈদের দিনে আমরা দাবি জানাই, আমাদের স্বজনদের মৃতদেহ অন্তত দেওয়া হোক।’
লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবারের প্রত্যেকটি গল্পই এমন মর্মান্তিক। এসব অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটানো স্বজনদের দাবি, সহায়তা না করলেও যেন মৃতদেহটি বুঝিয়ে দেওয়া হয় তাদের। চার মাস পার হলেও এখনও ডিএনএ রিপোর্ট না আসায় কবরগুলো পড়ে আছে বেওয়ারিশ হিসেবে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে ডিএনএ রিপোর্ট চলে আসার কথা আছে। ঈদের পরেই হয়তো রিপোর্ট আসবে।’
গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৯ জন যাত্রী নিহত হন। এ পর্যন্ত ২৫ জনের মৃতদেহ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ইমরান/রফিক
আরো পড়ুন