সাগরে ভোলার ২০ হাজার জেলে, দুশ্চিন্তায় পরিবার
মনজুর রহমান, ভোলা || রাইজিংবিডি.কম
উপকূলের নদী এবং সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া জেলেদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা মৎস্যবিভাগ। ইতোমধ্যে তারা প্রচার-প্রচারণা এবং জেলেদের কাছে খবর পৌঁছানের জন্য মৎস্য আড়তদারদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
ঘূর্ণিঝড় আসানির আঘাত হানার আশঙ্কা উপেক্ষা করে জেলেরা যাতে সাগর বা নদীতে মাছ শিকারে বের না হয়, সেই বিষয়টিও মনিটরিং করছে মৎস্যবিভাগ। ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার সঙ্গে সকল জেলেকে তীরে অবস্থান করতে হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, তারা জেলেদের নিরাপদে আনার কার্যক্রম শুরু করেছেন।
ঘূর্ণিঝড় আসানির সতর্কবার্তা এখনও পৌঁছায়নি জেলে পল্লিতে। সাগরে মাছ ধরতে যান ভোলার ২৫ হাজার জেলে। ইলিশ ধরা শেষ করে করে কেউ কেউ ফিরে এলেও এখনও সাগরে আছেন ২০ হাজার জেলে। তারা কখন ফিরে আসবে, তা কেউ বলতে পারছে না।
মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে থাকায় মৎস্যবিভাগও তাদের নিরাপদে আনতে পারছে না। তবে তাদের ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
এদিকে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় জেলে পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় রয়েছ্নে।
ইলিশ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন ভোলা জেলার দুই লাখের অধিক জেলে। তাদের মধ্যে ৬৫ হাজার জেলে রয়েছে, যারা সরাসরি বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরেন। ফিশিং বোর্ড নিয়ে সাগরে গিয়ে ফিরে আসেন ৭ থেকে ১০ দিন পর। ঘূর্ণিঝড় আসানির বার্তা পৌঁছানোর আগেই সাগরে আছে প্রায় ২০ হাজার জেলে। তাদের কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছানো যায়নি। এতে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারছে না। এতে দুশ্চিন্তা পড়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরা।
ভোলা সদরের শিবপির ইউনিয়নের মোশারেফের ছেলে মো. রিপন। তিনি রোববার (৮ মে) দুপুর ১২টার দিকে মাছ শিকারে গেছেন। কিন্তু দুপুরের পর থেকে বৈরী আবহাওয়ায় বিরাজ করতে থাকায় পরিবারের সদস্যরা শঙ্কায় রয়েছে।
মোসারেফ জানান, তার ছেলে যখন সাগরে যায়, তখন আবহাওয়া ভালো ছিল। তাছাড়াও তখন ঝড়ের বিষয়টা জানা ছিল না। এখন ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছেন তার পরিবার।
রিপনের মতো সর্তকবার্তা না পেয়ে সাগরে গেছে জেলে কামাল হোসেন। তাকে নিয়ে চিন্তিত স্ত্রী জান্নতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ ছিল। ঘরে অভাব। তাই জীবিকার তাগিদে কামাল সাগরে গেছে। এখন স্বামীকে নিয়ে চিন্তিত কামালের স্ত্রী। কখন কী হয় বলা তো যায় না।
জেলে মাকসুদের বোন তাসলিমা বলেন, ‘আমার ভাই সাগরে গেছে, তাকে নিয়ে টেনশনে আছি।’
ঝড়ের আগেই সাগরের জেলেদের দ্রুত নিরাপদে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে ভোলা জেলে ও মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ ফরাজি বলেন, অনেক জেলে গভীর সমুদ্রে গেছে। তাদের পরিবার এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছে। যেহেতু বৈরী আবহাওয়া শুরু হয়ে গেছে, তাই এখনই সময় তাদের ফিরিয়ে আনা দরকার।
জেলে, আড়ৎদার ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাগরের জেলেদের নিরাপদে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছে ২০ হাজার জেলে। তাদের সঙ্গে কমিউনিটি রেডিওসহ, আড়ৎদার ও জেলেদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপদে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গত ১০ বছরে অন্তত ২০টি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভোলার অর্ধ-শতাধিক জেলের প্রাণহানি ঘটেছে। ওইসব ঘটনায় নিঁখোজ রয়েছে অন্তত শতাধিক জেলে।
এ ব্যাপারে ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুজিত কুমার হাওলাদার বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে উপকূলের জেলেদের নিরাপদে আনার ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
/বকুল/
আরো পড়ুন