ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আসানি: খুলনা উপকূলের বেড়িবাঁধে ভাঙন আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ১০ মে ২০২২   আপডেট: ১৭:৫৮, ১০ মে ২০২২
আসানি: খুলনা উপকূলের বেড়িবাঁধে ভাঙন আতঙ্ক

কয়রা উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ একটি বেড়িবাঁধ

খুলনা উপকূলের ৪৫ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ফলে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে আছেন উপকূলের লাখো মানুষ। তবে, ঝড়ের কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দ্রুত ব্যবস্থার অংশ হিসেবে জিও ব্যাগ প্রস্তুত রেখেছে প্রশাসন।

এদিকে দুর্যোগ মোকাবিলায় খুলনা জেলার ৩৪৯টির পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৮১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এসব কেন্দ্রে প্রায় সোয়া চার লাখ মানুষকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হবে। 

খুলনায় দুর্যোগ পূর্ব ও পরবর্তী ব্যবস্থার জন্য দুই হাজার ৪৬০টি সিপিবি’র স্বেচ্ছাসেবক আছেন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিভিন্ন এনজিও’র ১ হাজার ১০০ স্বেচ্ছাসেবককে। 

সূত্র জানায়, কয়রা উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ গুলোর মধ্যে সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চ ঘাট, মদিনাবাদ তফসিল অফিসের সামনে হতে হামকুড়ার গোড়া মহারাজপুর ইউনিয়নের সুতির অফিস ও দশালিয়া, দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াপদা বাঁধ গাববুনিয়া, মাটিয়াভাঙ্গা (কোবাদক ফরেষ্ট অফিস থেকে ঘড়িলাল বাজার) আংটিহারা (সুইচ গেট থেকে পুলিশ ফাঁড়ি), পাতাখালি (খাশিটানা বাঁধ থেকে জোড়শিং বাজার) উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী-তীরবর্তী যেসব এলাকায় এখনও টেকসই বেড়িবাঁধ হয়নি। সেসব গ্রামে বসবাসকারী পরিবারগুলোর মাঝে ‘আসানি’ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। 

খুলনায় ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ২০ হাজার পরিবারের অনেকেই এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। এর মধ্যে আরেকটি দুর্যোগের সতর্ক সংকেত তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে ঘূর্ণিঝড় আসানি মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের জোড়শিং গ্রামের বাসিন্দা কামাল মোল্লা বলেন, ঘূর্ণিঝড় আইলায় তার ঘর ভেঙ্গে নদীতে বিলিন হয়ে যায়, এরপর নতুন করে আবার একটা ঘর তৈরি করেছেন তবে সেটিও নদী ভাঙনে বিলিন হয়ে যায়। পরে তিনি চলে যান রাঙামাটি। ৫ বছর পর ফিরে এসে আবারও মাথা গোজার ঠাই করেছেন। কিন্তু তার বাড়ির সামনে দিয়ে প্রবাহিত নদীতে আবারো ভাঙন দেখা দিয়েছে। যেকোন সময় জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। তাই আসানির আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। 

একই গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক মিলন হোসেন বলেন, নদীতে একটু জোয়ার বেশি হলে রাস্তা ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। জোড়শিং ট্যাকের মাথা পয়েন্টের বাঁধ জরুরি ভিত্তিতে কাজ না করলে আসানি আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাসে হাজার হাজার বিঘা মাছের ঘের, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি তলিয়ে যাবে।

কয়রা উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আসানি উপকূলে আঘাত হানবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১১৮ টি আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানো হবে। 

সেকশন-২ সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হাসনাইন মাহামুদু বলেন, আম্পান ও ইয়াসের পর থেকে কয়রা উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে কাজ চলছে। কয়রা উপজেলার দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিরা সে সব এলাকায় কাজ করছে।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, উপকূলের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ। জোরালো দাবি সত্ত্বেও এখনো টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। যার কারণে দুর্যোগ আসলেই আতঙ্কে বুক কাঁপে উপকূলবাসীর। 

তিনি বলেন, আম্পান ও ইয়াসের পর ষাট দশকের জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ব্যাপক কাজ করেছে। তবে কিছু এলাকায় কাজ না করায় আতঙ্কে  আছেন মানুষ। বিশেষ করে ঝুঁকির মুখে রয়েছে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গা, কয়রা সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট ও মদিনাবাদ তফসিল অফিসের সামনে থেকে হামকুড়ার গড়া। মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া ও সুতির কোণা।

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, খুলনা উপকূলের ৮৭৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে বর্তমানে ৪৫ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এর মধ্যে দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটার ৬ কিলোমিটার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমানে দাকোপের ৩১, ৩২ ও বটিয়াঘাটার ২৯ পোল্ডারে বাঁধে জরুরি মেরামত কাজ চলছে। 

ঘূর্ণিঝড়ে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নূরুজ্জামান/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়