ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘ব্ল্যাক রাইস’ চাষে সফল নোমান, বিক্রি নিয়ে শঙ্কা

আশরাফ আলী, মৌলভীবাজার  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১২, ১৪ মে ২০২২   আপডেট: ১২:২৭, ১৪ মে ২০২২
‘ব্ল্যাক রাইস’ চাষে সফল নোমান, বিক্রি নিয়ে শঙ্কা

আব্দুল্লাহ আল নোমান। মৌলভীবাজারের রাজনগরের কৃষক। প্রতিবছর ১০ একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেন। ফলনও ভালো পান। বোরো ধান বিক্রি করে পুরো বছর চলে তার সংসার। ইউটিউব দেখে আগ্রহ জন্মে ব্ল্যাক রাইস বা কালো ধান চাষের।

বোরো ধানের মৌসুমের শুরুতে পরামর্শ করেন মৌলভীবাজারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও বিনিয়োগ সহায়তা কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক মো. নিয়াজ মোর্শেদের সঙ্গে। তিনি তখনকার রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন নোমানকে। এবং ব্ল্যাক রাইস ধানের ব্যাপারে সহযোগিতার অনুরোধ জানান। 

কৃষি কর্মকর্তা তাকে রাজশাহী থেকে ৫ কেজি ব্ল্যাক রাইসের বীজ সংগ্রহ করে দেন। আর প্রয়োজনীয় সব পরামর্শের জন্য রাজনগর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। আব্দুল মান্নানের পরামর্শে তিনি সেই চারা দিয়ে ৭ শতাংশ জায়গায় ব্ল্যাক রাইসের চাষ করেন। প্রায় ৮ মণ ধান পান তিনি।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, আমন মৌসুমে কালো ধান বা ব্ল্যাক রাইসের চাষ হলেও বোরো মৌসুমে এই ধান চাষ হয়নি। তবে ব্যক্তিগতভাবে কেউ চাষ করলে সেটি অধিদপ্তর জানে না।

কৃষি বিভাগ জানায়, এই ধানগাছের পাতা ও কাণ্ডের রঙ সবুজ হলেও ধান ও চালের রঙ কালো। তাই এ ধানের জাতটি কালো চালের ধান নামে পরিচিত। বীজ বপনের পর কোনোটির পাতা সবুজ আবার কোনটির পাতা বেগুনি হলে চালের রঙ কালোই হয়। এ কারণে কোথাও সবুজ আবার কোথাও বেগুনি রঙের ধানপাতায় চমৎকার দর্শনীয় হয়ে ওঠে ধানক্ষেতগুলো।

এই চালের ভাত আঠালো ও সুগন্ধি। পায়েস, খিচুড়ি, ঘি-ভাত, পাস্তা, পাঁপড়, নুডলস করেও খাওয়া যায়।

কৃষক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘অনেক আগ্রহ নিয়ে ব্ল্যাক রাইস ধান চাষ করি। এগুলো হাওর থেকে সংগ্রহ করে মাড়াই দিয়ে প্রায় ৮ মণের মতো ধান পাই। এই ধানগুলো নিয়ে শঙ্কায় পড়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এই কালো ধান বিক্রি এবং ভাঙ্গানো নিয়ে পড়েছেন দুর্ভোগে। ব্ল্যাক রাইস ধান ভাঙ্গানোর জন্য মৌলভীবাজারে নেই কোনো মেশিন। ফলে বিপাকে পড়েছেন তিনি। ধান ভাঙ্গাতে না পারলে বিক্রিও করতে পারছেন না। এতে ক্ষতির মধ্যে পড়তে হবে তাকে। এজন্য তিনি কৃষি বিভাগের সহযোগিতা চেয়েও পাননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি বিভাগ যদি ধান ভাঙ্গা ও বিক্রিতে সহযোগিতা করে, তাহলে তিনি কিছুটা হলেও লাভবান হবেন। নয়তো তাকে লোকসানের মধ্যে পড়তে হবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর, ডিএনএ স্পেশালিস্ট ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো বিজ্ঞানী ড. তোফাজ্জল ইসলাম কালো চালের উপকারিতা সম্পর্কে বলেন, ‘কালো চালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। এই চালে অ্যান্থোসায়ানিন বেশি, যা ক্যান্সার প্রতিরোধী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই চালে সুপার অক্সিড থাকে, ফলে এর ভাতে শরীরে গ্লুকোজ তৈরি হয়। শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ চাল শুধু ডায়াবেটিস রোগীই না, বৃদ্ধ বয়সের সব মানুষের জন্য খুব কার্যকর বলা হয়।’

এ ছাড়া, আমিষ, ভিটামিন, জিংক, খনিজ পদার্থসহ অন্য উপাদানগুলো সাধারণ চালের চেয়ে বেশি থাকে বলে জানান এই বিজ্ঞানী।

রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি এখানে এক মাস হলো আসছি। এই ধান চাষের ব্যাপারে আমার জানা নেই।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, ‘এই ধান চাষের ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হয় না। তবে পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। আর আমাদের কাছে এই ধানের কোনো বীজ নেই। মূলত আমরা কৃষকদের উচ্চফলনশীল ধান চাষের ব্যাপারে উৎসাহ দেই।’

/এইচএম/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়