ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

খুলনায় চালের দাম বাড়াচ্ছে মিলগুলো: বণিক সমিতি

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ৩ জুন ২০২২   আপডেট: ০৮:২৩, ৪ জুন ২০২২
খুলনায় চালের দাম বাড়াচ্ছে মিলগুলো: বণিক সমিতি

চালের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চাল মজুতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেউ অবৈধভাবে চাল মজুত করলে ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবারের এ নির্দেশনার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু হয়েছে। 

খুলনা ধান-চাল বণিক সমিতির সভাপতি মনির আহমেদ বলন, ‘পাইকারি বা খুচরা ব্যবসায়ীরা ধান বা চাল মজুত রাখেন না। ধান-চালের মজুত ও দাম সব নিয়ন্ত্রণ করে থাকে অটোরাইস মিলগুলোর মালিকরা। তারাই এখন ধান-চালের রাজত্ব করে। ভরা মৌসুমে এইভাবে চালের দাম বাড়তে আগে কখনো দেখিনি। 

খাদ্য বিভাগের দাবি, জেলায় দুই শতাধিক লাইসেন্সধারী হাসকিং চালকল ও ১৪টি অটোরাইস মিল নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে। 

এদিকে, কিছুদিন আগেই কাটা হয়েছে বোরো ধান। ইতোমধ্যে বাজারে নতুন চালও আসতে শুরু করেছে। তবে এই ভরা মৌসুমেও লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। খুলনায় শুধুমাত্র একমাসেই চালের দাম বেড়েছে তিনবার। মানভেদে প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত। চালের দাম বৃদ্ধিতে খুলনার ব্যবসায়ীরা একে অপরকে দুষছেন। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ- ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাড়িয়েছে চালের দাম। 

নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে জানা গেছে, প্রতিকেজি নতুন সরু মিনিকেট চাল ৬৮ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অনুরুপভাবে মাঝারি নতুন মিনিকেট ৬৫ টাকা, বাঁশমতি ৮০ টাকা, নাজিরশাল ৭০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। 

অথচ একসপ্তাহ আগেও একই চাল বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা ৬০ টাকায়। অনুরুপভাবে মাঝারি মিনিকেট চাল ৫৬ টাকা, বাঁশমতি ৭২ টাকা, নাজিরশাল ৬৫ টাকায় বিক্রি করেছেন। যদিও দাম বৃদ্ধির জন্য খুচরা ব্যবসায়ী ও পাইকাররা এক অপরের ওপর দোষারোপ করছেন। 

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জনা গেছে, বড় চাল মালিকদের অতিমাত্রায় ধানের মজুতনীতির কারণে দফায় দফায় বেড়ে চলেছে চালের দাম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরীর বড় বাজারের এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, অতিরিক্ত মজুতের কারণে বেড়ে চলেছে চালের দাম। বিভিন্ন কোম্পানি এখন চালের ব্যবসায়ে নেমে পড়েছে। হাটের দর থেকে অতিরিক্ত দামে ধান ক্রয় করে মিলে নিয়ে যাচ্ছে। ধানের সংকট দেখিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে তারা। 

তিনি আরো বলেন, এলসির চাল বাজারে নেই। এ সুযোগে ওই সব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা কর্পোরেট সিন্ডিকেট করে ইচ্ছা মতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। 

দিনাজপুর ভান্ডারের মালিক মো. ফারুখ আহমেদ বলেন, সরকার মিল মালিকদের কোটি কোটি টাকা লোন দিচ্ছে। এ টাকা দিয়ে তারা হাজার হাজার মণ ধান কিনে মজুত করছে। চালের সঙ্কট দেখা দিলে তারা মজুত করা চাল বাজারজাত করবে। সিলেটের বন্যার কথা বলে তারা চালের দাম বৃদ্ধি করছে। 

সিলেটের চাল খুলনায় আসেনা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সিলেটে বন্যা হলে এখানকার বাজারে উত্তাপ বাড়বে কেন? চালের দাম কমানোর জন্য দেশের প্রতিটি মিলে নিয়মিত অভিযানের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

খুচরা চাল বিক্রেতা মো. কামরুল হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে চালের বাজারে উত্তাপ ছাড়াচ্ছে। এবার দেশে রোরোর আবাদ বেশ হয়েছে। ধানের কোন সঙ্কট নেই। বাজারের বড় বড় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে চালের দাম বৃদ্ধি করেছে। তাদের গোডাউনে অভিযান করলে প্রকৃত রহস্য বের হয়ে আসবে। 

বড় বাজারে কথা হয় মাসুদ নামে এক চাল ক্রেতার সঙ্গে। সাত সদস্যের পরিবার তার। আয়ের সাথে ব্যায়ের কোনো সংগতি খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। প্রতিমাসে এখন তাকে চাল কেনা বাবদ আরও ২৫০ টাকা বেশি ব্যায় করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির কারণে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তার।

নির্মাণ শ্রমিক ছিদ্দিক সানা বলেন, গরীবের চাল বলে খ্যাত স্বর্ণা। সেটিও প্রতিকেজিতে ৩ টাকা করে বেড়েছে। বাড়েনি তার দৈনিক শ্রমিকের মূল্য। পরিবারের ৮ জন সদস্যকে নিয়ে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কারণ প্রতিমাসে তার ৫০ কেজি চালের প্রয়োজন হয়। এ চাল কিনতে এখন তাকে আরও ১৫০ টাকা নতুন করে যোগ করতে হবে।

খুলনা ধান-চাল বণিক সমিতির সভাপতি মনির আহমেদ বলন, পাইকারি বা খুচরা ব্যবসায়ীরা ধান বা চাল মজুত রাখেন না। ধান-চালের মজুত ও দাম সব নিয়ন্ত্রণ করে থাকে অটোরাইস মিলগুলোর মালিকরা। তারাই এখন ধান-চালের রাজত্ব করে। তবে ভরা মৌসুমে এই রকম চালের দাম বাড়তে কখনো দেখেননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন জানান, জেলায় দুই শতাধিক লাইসেন্সধারী হাসকিং চালকল রয়েছে। এ ছাড়া ১৪টি অটোরাইস মিলও আছে। ‘সরকারি আইন অনুসারে, আমরা নিয়মিত ওই মিলগুলো পরিদর্শন করছি। আমাদের কয়েকটি দল বিভিন্ন মিল পরিদর্শন করেছে। একই সঙ্গে লাইসেন্সধারী পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের গোডাউনও আমরা নিয়মিত পরিদর্শন করছি।’ মজুত আইনে যা আছে, তার বেশি ধান বা চাল খুলনার কোনো মিলে এখনও পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করেন তিনি। 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়