ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ঈদে বড় গরু বিক্রি করতে পারেনি খামারিরা

কাওছার আহমেদ, টাঙ্গাইল  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১০, ১৭ জুলাই ২০২২  
ঈদে বড় গরু বিক্রি করতে পারেনি খামারিরা

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল চকদার। গত কোরবানির ঈদ কেন্দ্র করে শতাধিক গরু মোটাতাজা করেন তিনি। তার খামারে মাঝারি আকারের গরুর সংখ্যা বেশি ছিল। এ সব গরুর বাজারে চাহিদা থাকায় ভালো দাম পেয়েছেন। ঈদে গরু বিক্রি করে তিনি লাভবান হয়েছেন। 

দুলাল চকদার বলেন, ‘দুই বছর করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছি। এ বছর দেশের বাইরে থেকে গরু না আসায় দেশীয় গরুর চাহিদা ছিল। তাই দাম ভালো পেয়েছি।’ 

শুধু দুলাল চকদার নয়, গত ঈদে টাঙ্গাইলের ছোট ও মাঝারি আকারের গরুতে খামারিরা লাভবান হয়েছেন। তবে বড় গরু নিয়ে হতাশায় পড়েছেন তারা। এছাড়াও ঈদের আগে ‘লাম্পি স্কিন’ রোগের সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় অনেক খামারি গরু বিক্রি করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রানা মিয়া জানান, ঈদে টাঙ্গাইলে পশুর ঘাটতি ছিল না। ১ লাখ ৭৩ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। এর বেশির ভাগই ছিল ছাগল। এ বছর ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশিই ছিল। বিশেষ ব্যক্তি ছাড়া ১০/১২ লাখ টাকা দিয়ে কেউ কোরবানি দেয় না। রোগাক্রান্ত গরুগুলো বিক্রি করতে পারেনি খামারিরা। 

দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদের মেয়ে কলেজছাত্রী হামিদা আক্তার তার খামারে লালন পালন করা ৪৫ মণ ওজনের ‘মানিক’ বিক্রি করতে পারেননি। ঈদের আগে গাবতলী হাটে তোলা হলেও ষাড়টি দেখে ক্রেতা আকৃষ্ট হয়নি। গত বছর গাবতলীর কোরবানির হাটে মানিকের দাম ৫ লাখ টাকা হলেও এবার কেউ দামই করেননি। তবে তার মাঝারি আকারের ষাড়টি বিক্রি করেছেন।

হামিদা বলেন, ‘সাত মণ ওজনের যে ষাঁড়টি ছিল, সেটি বিক্রি হয় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। হাটে ক্রেতা না থাকায় ঈদের দিন সকালে মানিককে নিয়ে বাড়ি চলে আসি। হাটে যাতায়াত বাবদ গাড়ি ভাড়া ১০ হাজার টাকা, ইজারা বাবদ ২ হাজার টাকা, চারদিনের কামলা বেতন ও অন্যান্য খরচ হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকা।’

স্বপ্ন দেখা এই তরুণী বলেন, ‘গরুর বড় খামারি হতে না পারলেও এবার দুগ্ধ খামার করবো। গাবতলী হাটে এবার বিক্রি করা ছোট ষাঁড়ের ১ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ আমার বিকাশ এজেন্ট, দর্জির কাজ আর ব্যবসার জমানো টাকা দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের কয়েকটি গাভীর বাচ্চা কিনবো। সেই বাচ্চাগুলো লালন পালন করে বড় করবো। এ জাতের গাভী অনেক দুধ দেয়। আমার সেই খামারে গাভীগুলোর সঙ্গে মানিকও থাকবে।’

কালিহাতী উপজেলার মীর হামজানী গ্রামের আল আমীন ঈদকে কেন্দ্র করে ৩২ মণ ওজনের ষাড় প্রস্তুত করেন। নাম রাখেন প্রিয় ফুটবলারের নামে ‘মেসি’। কিন্তু ঈদে সেই মেসির ক্রেতা পাওয়া যায়নি। আল আমীন বলেন, ‘ঈদে মেসিকে বিক্রি করতে না পারলেও ঈদকে কেন্দ্র করে প্রস্তুত করার মাঝারি আকারের পাঁচটি ষাড় বিক্রি করতে পেরেছি। মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা থাকায় দামও ভালো পেয়েছি। শুধু মেসিকে নিয়ে বিপাকে পড়েছি।’

টাঙ্গাইল পৌরসভার কাগমারা এলাকার তরুণ খামারি রাকিব মিয়া বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে তিনটি ষাড় প্রস্তুত করেছিলাম। কিন্তু খামারে থাকা পাঁচটি গরুই ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত হয়। তাই ঈদে প্রস্তুত করা ষাড়গুলো বিক্রি করতে পারিনি।’ 

সদর উপজেলার বেতর গ্রামের বোলনাথ মন্ডল বলেন, ‘আমার খামারে তিনটি গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত। গত ঈদে আমাদের গ্রামের অনেকেই এই রোগের কারণে ঈদের জন্য প্রস্তুত করা ষাড় বিক্রি করতে পারেনি।’

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়