ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গার্ডার পড়ে ৫ মৃত্যু: উৎসবের বাড়ি শোকে স্তব্ধ

আরিফুল ইসলাম সাব্বির, সাভার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৪, ১৬ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ২১:০৭, ১৬ আগস্ট ২০২২
গার্ডার পড়ে ৫ মৃত্যু: উৎসবের বাড়ি শোকে স্তব্ধ

সদ্য বিয়ে দেওয়া মেয়েকে জামাতাসহ নিজের বাড়ি আনতে গিয়েছিলেন মাসহ পরিবারের কয়েকজন। মেয়ে-জামাতা আসবেন বলে ভাড়া বাড়ি সেজেছিল উৎসবের মতো। আয়োজন হওয়ার কথা ছিল খাবার-দাবারের। ঢাকার দক্ষিণখান থেকে আশুলিয়াতে নববধূর মায়ের ভাড়া বাসায় আসার কথা ছিল সবার। কিন্তু হঠাৎই খবর আসে ঘাতক গার্ডারচাপায় নবদম্পতি ছাড়া প্রাণ গেছে পাঁচজনের। মুহূর্তে উৎসবের জন্যে সেজে ওঠা বাড়িটি রূপ নেয় বিলাপ-কান্নার রোলে। ঘটনার একদিন পর মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বেদনার্ত স্বজন ও প্রতিবেশীদের। 

যে বাসা উৎসবে মাতার কথা, সেখানে সবার বিলাপ— কেমন করে কেনো এমনটা হল! কারোর যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। এভাবে একটা পুরো পরিবার হারিয়ে যেতে পারে।

শনিবার (১৩ আগস্ট) আশুলিয়ার খেঁজুরবাগান এলাকায় ভাড়া বাসার ছাদে আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে অনুষ্ঠান হয়। সেখানে মেয়েকে বিয়ে দেন ফাহিমা আক্তার (৩৮)।

মেয়ের নতুন জীবন নিয়ে খুশি ছিলেন ফাহিমা। দুইদিন পর সোমবার (১৫ আগস্ট) মেয়ে ও জামাতাকে আনতে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি যান তিনিসহ বেশ কয়েকজন। একই প্রাইভেটকারে ফাহিমাসহ আশুলিয়ায় ফিরছিলেন মেয়ে রিয়া, জামাতা হৃদয়, হৃদয়ের বাবা আইয়ুব আলী হোসেন রুবেল, রিয়ার খালা ঝর্ণা এবং ঝর্ণার দুই সন্তান জাকারিয়া ও জান্নাতুল। শেষ পর্যন্ত আশুলিয়ায় আর ফেরা হয়নি তাদের। 

বিকেলে ঢাকার উত্তরার ৩নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনের সড়কে চলন্ত অবস্থায় প্রাইভেটকারটির ওপর বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান ফাহিমাসহ পাঁচ জন। নব দম্পতিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

ঘটনার পরপরই বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আশুলিয়ার খেঁজুর বাগান এলাকায় ফাহিমা আক্তারের ভাড়া করা বাসার প্রতিবেশীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। নব দম্পতির সুখের সংসার দেখার সুযোগও হলো না মায়ের— এমন মন্তব্য করে অশ্রুসিক্ত হতে দেখা যায় অনেককেই। ঘটনার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

দুপুরে ওই বাসায় গিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৮ তলা ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় ৩ কক্ষ বিশিষ্ট ফ্লাটের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতেন ফাহিমা আক্তার (৩৮) ও মেয়ে রিয়া। বাকি দুটি কক্ষে থাকেন আরও দুটি পরিবার। পোশাক কারখানায় কাজ করে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেন ফাহিমা। মেয়ে রিয়াও পোশাক কারখানায় কাজ করেন। মেয়েকে ওই ভবনের ছাদে আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে বিয়ে দেন ফাহিমা। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে খুশি ছিলেন তিনি।

একই ফ্লাটের একটি কক্ষে মাকে নিয়ে ভাড়া থাকেন মাবিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, `খালাম্মা (ফাহিমা) সবাইকে খুব আদর করতেন। কখনো আমাদের একটা ধমক পর্যন্ত দেননি। আপাও (রিয়া) খুবই ভালো মানুষ। যাদের কারণে এ ঘটনা ঘটছে আমরা তাদের বিচার চাই।‘ 

একই ভবনের ৫ম তলায় ভাড়া থাকেন নাসরিন বেগম। তিনি বলেন, ‘মেয়েকে আনতে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় ফাহিমা আপা আমাকেও যেতে বলেছিলেন। আমি ব্যস্ততার কারণে যেতে পারিনি। সড়কে তাদের জীবন গেলো এটা খুবই কষ্টদায়ক। যাদের ভুলে এ ঘটনা ঘটছে তাদের কঠিন শাস্তি চাই।’

নিহত ফাহিমা আক্তারের ভাই মো. আফরান মন্ডল বলেন, দুলাভাই (ফাহিমা আক্তারের স্বামী) অসুস্থ। তিনি জামালপুরে থাকেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে ফামিহাকে জামালপুরের টেঙ্গারগড়, ঝর্ণা এবং ঝর্ণার দুই সন্তানকে একই জেলার মেলান্দহে দাফন করা হবে।
 

/বকুল/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়