লাউয়াছড়ার বিরল উদ্ভিদ ‘আফ্রিকান টিকওক’ মারা গেছে

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রধান প্রবেশ পথে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল বিরল উদ্ভিদ আফ্রিকান টিকওক। উদ্যানের ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে আফ্রিকান টিকওক প্রজাতির উদ্ভিদ একটি।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, এই বনে দুটি আফ্রিকান উদ্ভিদ ছিল। রেললাইনের উপরে থাকা প্রথম উদ্ভিদটি পূর্বেই ঝড়ে পড়ে গেছে। তখন থেকে একমাত্র বিরল উদ্ভিদ হিসেবে দাঁড়িয়ে ছিল প্রধান প্রবেশ পথে থাকা আরেকটি আফ্রিকান টিকওক। সম্প্রতি উদ্ভিদটির পাতা ঝরে পড়ে গেলে বন বিভাগের নজরে আসে। লাউয়াছড়া বন বিটের বর্তমান বিট কর্মকর্তা আনিসুর রহমান ও সাবেক বন বিট কর্মকর্তা মামুন অর রশিদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, বৃষ্টির মৌসুমে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদটির পাতা আকষ্মিকভাবে ঝরে যায় এবং গাছের গোড়ায় পচন ধরে। যা দেখে ধারণা করা হচ্ছে, উদ্ভিদটি মারা গেছে।  

সরেজমিন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে থাকা বিরল উদ্ভিদটির কাছে গিয়ে দেখা যায়, গাছের পাতা ঝরে পড়ে গেছে এবং গোড়ার মধ্যে পচন দেখা দিয়েছে। প্রায় ৮ ফিট গোলাকার উদ্ভিদটির সঠিক বয়স জানতে না পারলেও ধারণা করা হচ্ছে, ৭০ বছরের কাছাকাছি। এর উচ্চতা ৮০ ফিটের মতো হবে। উদ্যানে আগত পর্যটকদের আর্কষণ ছিল এই বিরল উদ্ভিদটি।

কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি ও শিক্ষক মনজুর আহমেদ আজাদ মান্না জানান, আফ্রিকান টিকওক গাছটি শত বছরের পুরনো। শত ফুট উপরে ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে আছে। কালের সাক্ষী হয়ে ছিল গাছটি। গাছটি মারা যাওয়ায় খারাপ লেগেছে। ধারণা করা হয়, কোনো ব্রিটিশ নাগরিক উদ্ভিদটি লাউয়াছড়া বনে রোপণ করেন।

ইকো ট্যুরিস্ট গাইড ও পরিবেশকর্মী মো. আহাদ মিয়া জানান, জাতীয় উদ্যানে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের গাছটি সম্পর্কে ব্রিফিং করলে তারা আকৃষ্ট হতেন এবং গাছের সঙ্গে ছবি তুলে রাখতেন স্মৃতি হিসেবে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, গাছটির পাতা ঝরে পড়া দেখে তিনি বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) কে অবগত করেন। গাছটি মারা যাওয়ার কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, গাছটির বয়স। একটা সময় উদ্ভিদ কিংবা প্রাণীর জীবনচক্রের প্রাকৃতিকভাবে সমাপ্তি ঘটে।