লক্ষ্মীপুরে দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতি, মজুরি নিয়ে আক্ষেপ

শরতের কাশফুল, ঢাকের বাদ্য আর প্রতিমা তৈরিতে কারিগরদের ব্যস্ততা জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। আগামী ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে লক্ষ্মীপুর জেলার ৭৯টি মণ্ডপে দিনরাত প্রতিমা তৈরিতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। 

আয়োজকরা বলছেন, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরপরও থেমে নেই আয়োজন। রকমারি আলোকসজ্জার বর্ণালী বাহারে সাজানো হচ্ছে পূজা মণ্ডপ ও তার আশপাশের এলাকা। এছাড়া বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে প্রতিটি মণ্ডপে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। সব মিলিয়ে উৎসবের জন্য প্রস্তুত লক্ষ্মীপুর।

জানা গেছে, দেবী দুর্গা অসুর দমনের শুভ শক্তি নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করবেন। দুষ্টের দমন আর সৃষ্টের পালনের জন্যই দশহস্তে দেবী দুর্গা স্বর্গ থেকে মর্ত্যলোকে আগমন করেছিলেন। এরই ধারাহিকতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতি বছর শারদীয় উৎসব হিসেবে দুর্গাপূজা উদযাপন করে আসছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার জেলার ৫টি উপজেলায় ৭৯টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। 

এদিকে পূজা চলে আসায় পরিবার পরিজন নিয়ে কেনা কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। জামা কাপড় তৈরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনতে শহরের বিপণী বিতানগুলোতে ভিড় করছেন তারা।

কয়েকটি পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, কাদা মাটি, বাঁশ, খড় ও সুতলি দিয়ে তিলতিল করে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা। বিভিন্ন মন্দিরে একেক জন কারিগর দুর্গা পূজা শুরুর ১০দিন থেকে ১৫দিন আগে থেকেই প্রতিমা তৈরিতে সময় নিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দক্ষ কারিগররা প্রতিমা বানানোর কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন। আগামী দুই একদিনের মধ্যে কারিগররা তাদের নিপুন হাতে প্রতিমা রং করার কাজ শুরু করবেন।

প্রতিমা কারিগররা জানান, বংশ পরম্পরায় তারা প্রতিমা তৈরির কাজে জড়িত। বছরের এই সময়ে কাজের চাপ বেশি থাকায় রাত দিন পরিশ্রম করে মনের মতো দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করছেন। এক সেট প্রতিমা তৈরি করতে তাদের সময় লাগে এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ। তবে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিতে এবং মজুরি নিয়ে অসন্তোষ ও আক্ষেপের কথা জানালেন তারা। 

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ লক্ষ্মীপুর শাখার সাধারণ সম্পদক স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘মণ্ডপ গুলোর নিরাপত্তায় ইতিমধ্যে প্রশাসনের উদ্যোগে সিসি ক্যামরা বিতরণ করা হয়েছে। জেলায় বরাবরই শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন হয়। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটবে না বলে আশা করছি।’

লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, ‘দুর্গোৎসব সফল করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন দফায় দফায় বৈঠক করছে আয়োজকদের সঙ্গে। পূজায় নিরাপত্তায় প্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়ন ভিত্তিক ও মণ্ডপ ভিত্তিক টহল টিম গঠন করা হয়েছে। পূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’