ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

মাটির বিপরীতে বালু দিয়ে চলছে বেড়িবাঁধ তৈরি

ইমরান হোসেন, বরগুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৩:৫৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
মাটির বিপরীতে বালু দিয়ে চলছে বেড়িবাঁধ তৈরি

বালু দিয়ে চলছে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাণাধীণ পাথরঘাটার চরদোয়ানী স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ হচ্ছে মাটির বদলে বালু দিয়ে। নিয়ম বহির্ভূত এই কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাধা দিলেও থামেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়রা বলছেন, বালু দিয়ে বাাঁধ নির্মাণ করলে পানির চাপে যে কোনো মুহূর্তে বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বালু দিয়ে বাাঁধ নির্মাণের এ কাজটি বাস্তবায়ন করছেন চায়নার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।  সিডিউল বহির্ভূত এমন কাজে উদ্বেগ জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ জানিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়কে চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া,পটুয়াখালীর গলাচিপা, কলাপাড়া ও বরগুনার পাথরঘাটায় ৬টি পোল্ডারে ২০৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ব্যায় ধরা হয় ১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। বাাঁধ নির্মাণের টেন্ডারটি পায় চিনের চংকিং ইন্টারন্যাশনাল কনসট্রাকশন করপোরেশন। 

বরগুনার পাথরঘাটার বলেশ্বর নদীর ভাঙন কবলিত মানুষদের রক্ষার জন্য ৩৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ব্যায় ধরা হয় ১২৮.৯ কোটি টাকা। আর এ কাজে চরদোয়ানী এলাকার বাঁধ নির্মাণে মাটির বিপরীতে ব্যবহার করা হচ্ছে বালু। 

চরদুয়ানী এলাকার রাসেল হোসেন, আকবর আলী, মোতালেব সিকদারসহ একাধিক বাসিন্দা রাইজিংবিডিকে বলেন, এই বেড়িবাঁধ তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সময়ে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ে এই এলাকার মানুষকে রক্ষা করবে এই বাঁধ। তবে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাটির বিপরীতে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছে। 

একই এলাকার প্রবীন বাসিন্দা আব্দুল খালেক বলেন, ‘২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরে এই এলাকায় আঘাত হানে। ওই ঝড়ে ৪০ জন মানুষ প্রাণ হারায়। বঙ্গোপসাগরের কুলঘেষা হওয়ায় তীব্র ভাঙনে কয়েক কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়েছে নদী গর্ভে । অনেক আন্দোলনের পরে আমরা স্থায়ী বেড়িবাঁধ পেতে চলেছি। কিন্তু সেই বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে বালু দিয়ে। এই বালুর বেড়িবাঁধ পানির চাপ সহ্য করতে পারবে না। ফলে আগের পরিস্থিতি থেকে যাবে।’

একই এলাকার এনামুল হোসেন বলেন, ‘ড্রেজার দিয়ে লোকাল বালু ফেলে উপরে মাটির প্রলেপ দিয়ে বালু ঢেকে দিচ্ছে ঠিকাদারের লোকজন। এই বেড়িবাঁধ মিশে যাবে বৃষ্টির পানিতে। এর থেকে আগের ভাঙাচোরা বেড়িবাঁই ভালো ছিল।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চরদোয়ানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জুয়েলের সহায়তায় বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ হচ্ছে। কেউ বাধা দিতে গেলে তাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘এই কাজের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি ঠিকদারি প্রতিষ্ঠানটি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পটুয়াখালী সার্কেলের তত্ত্বাবধায় মো. কাইছার আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘একাধিকবার কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহায়তায় সিডিউল বহির্ভূত বালু দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজটি করে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।’

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের সিএসই হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাছে আমরা অসহায়। আমরা একাধিকবার তাদের সিডিউল বহির্ভূত কাজ বন্ধে চিঠি দিয়েছি। আমি নিজে চরদোয়ানী এলাকা ঘুরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চায়নার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বালু দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ বন্ধে তাদেরকে বলেছি। তারপরেও তারা তাদের কাজ বন্ধ করেনি। আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।  ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির এই অংশের বিল কেটে রাখা হবে।’ 

বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান টেলিফোনে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সিডিউল বহির্ভূতভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজের কথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। যেহেতু বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এ কাজে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। এখানে সিডিউল বহির্ভূত কাজ হচ্ছে এটি প্রমাণিত। তাই আমি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে এ বিষয়ে সুপারিশ করে চিঠি দিয়েছি।

উল্লেখ্য, গত বছর একই উপজেলার সিডর পয়েন্ট এলাকায় বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ শুরু হলে স্থানীয়দের চাপের মুখে মাটি দিয়ে বাঁধের প্রোটেকশন দিয়ে কাজ শেষ করে একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়