ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান ঝুঁকিতে কৃষি খাত: কৃষিমন্ত্রী

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ২ অক্টোবর ২০২২  
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান ঝুঁকিতে কৃষি খাত: কৃষিমন্ত্রী

ছবি: রাইজিংবিডি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের কৃষি খাত সবচেয়ে ক্ষতির মুখে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি খাতে যে ক্ষতি হবে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হুমকির মধ্যে রয়েছে দেশের গ্রামের কৃষকরা। কারণ দেশের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ দরিদ্র ও কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই কৃষিকে সর্বপ্রথম রক্ষা করতে হবে। এটাই প্রথম চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে অন্যান্য সেক্টরকেও মোকাবিলা করতে হবে।

শনিবার (১ অক্টোবর) বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের পেলাইদ গ্রামে খ্রিস্টিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি) ক্লাইমেট সেন্টার উদ্বোধনকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে এখন আমাদের সামনে অন্যতম প্রধান সমস্যা সামনে আসছে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সরকার কাজ করছে। ডায়নামিক লিডার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া হচ্ছে সবুজ বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা করা।

মন্ত্রী আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে রয়েছে আমাদের কৃষি খাত। আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষ এখনো কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। এদের মধ্যে অনেকেই দারিদ্র্যপীড়িত। এ জলবায়ু পরিবর্তনে তাই সবাই ক্ষতির মুখে পড়ছে। তাই আমাদের চাওয়াটা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির মুখে পড়া কৃষিকে রক্ষা করা। সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপক বিনোয়োগ অব্যাহত রেখেছেন। এ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে পানির স্তরও নিচে নেমে যাচ্ছে। আমরা সব সংকট মোকাবিলায় প্রস্তত রয়েছি।

সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ । ফল ফসলের জাত ও চাষ পদ্ধতির নানা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে দেশে কৃষি খাতের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে কফি ও কাজু বাদাম উৎপাদন হচ্ছে। দেশের পতিত থাকা বিভিন্ন স্থানে ফল, ফসল ও সবজির উৎপাদন হচ্ছে। এক ফসলির জায়গায় আমরা তিন ফসল উৎপাদন করতে পারছি। হাওর ও নদীকেন্দ্রিক এলাকার কৃষিকেও আমরা রক্ষা করতে পারছি। সবই সম্ভব হয়েছে কৃষির অগ্রগতির কারণেই।

এ সময় মন্ত্রী বিভিন্ন দেশের কৃষি খাতের উদাহরণ টানেন। সরকারের পাশাপাশি গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

প্রফেশনালদের রাজনীতিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে এখন দেখা যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে আসছেন। এটা ভালো নয়। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দেশের প্রফেশনালদের রাজনীতিতে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, চলমান যুদ্ধের কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে দেশের মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমাদের কয়েকগুণ বেশি দামে সার কিনতে হয়েছে। শিপমেন্টের কারণে সময়মতো সার আনতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা মোকবিলা করতে হয়েছে। এতে কৃষিও ক্ষতির মুখে পড়েছে।

পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, বর্তমানে জলবায়ুর অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা তখন বৃষ্টি হচ্ছে না, আবার যখন হচ্ছে তখন হওয়ার কথা না। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে পৃথিবীর ১৯৬টি দেশ নড়েচড়ে বসেছে। এক্ষেত্রে মূল বিষয় হচ্ছে দায়িত্ব নেবে কে? জলবায়ুর এ পরিবর্তনে খাদ্য উৎপাদন অনেকাংশে কমে যাবে। বিশেষ করে ধান ও গম আলু উৎপাদন কমে যাবে।

জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. সালিমুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন শুধুমাত্র এশিয়ার বিষয় নয়, এটি সারা বিশ্বের জন্য এক ধরনের হুমকি। বর্তমান সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে হারিকেনের সৃষ্টি হচ্ছে তা জলবায়ুর জন্য হুমকি।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ, ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ড জার্মানির ইন্টারন্যাশনাল প্রোগাম ডিরেক্টর মিস পেট্টা বারনার, সিসিডিবির ক্লাইমেট অ্যাডভাইজারি বডির সদস্য ড. সালিমুল হক, সিসিডিবি কমিশনের চেয়ারম্যান ডেভিড এ হালদার ও প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মিস জুলিয়েট মালাকার।

/রফিক/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়