ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

যমুনার ভাঙনে দিশেহারা ভূঞাপুরের মানুষ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৯, ২৬ অক্টোবর ২০২২  
যমুনার ভাঙনে দিশেহারা ভূঞাপুরের মানুষ

ভূঞাপুরে যমুনা নদীর পূর্বেপাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীর পূর্বেপাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। তীব্র ভাঙনে ইতোমধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। অসময়ে এমন ভাঙনে পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষজন। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাব পড়ায় ভাঙনের তীব্রতা আরো বেড়েছে।  

এদিকে যমুনা নদী থেকে অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলণ ও নদীর পাড়ে অবৈধভাবে খাল বানিয়ে পরিবহনের জন্য বালুর স্তূপ তৈরি করায় ভাঙন শুরু বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, নিকরাইল ইউনিয়নের কোনাবাড়ির একাংশ, পাতিতাপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে রাত পাড় করছেন নদী পাড়ের শত শত পরিবার। দিনের আলোয় ভাঙন না হলেও রাতের বেলায় ভাঙন চলে সবচেয়ে বেশি। এতে ঘর বাড়িসহ আসবাবপত্র নদী গর্ভে বিলীন হয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেকেই।

এদিকে ব্যক্তি উদ্যোগে চিতুলিয়াপাড়া, ভালকুটিয়া ও গ্রামের মানুষজন তাদের পৈতিক বসতভিটা রক্ষায় যমুনা নদীতে মাটি দিয়ে ভরাট করে ব্যাগ ফেলেছেন। তবে তাদের এই উদ্যোগও কোনো কাজে আসছে না। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে নদী পাড়ের এই পুরাতন জনপথের গ্রামগুলো দ্রুতই  মানচিত্র থেকে মুছে যাবে বলে আশঙ্কা বাসিন্দাদের।

চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের নান্নু ও ফজল বলেন, কয়েকদিনের ভাঙনে শত শত বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও রইল না। বাড়ি-ঘর ও জমি রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি। এরমধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে নদী ভাঙনের তীব্রতা আরো বেড়েছে। এছাড়া নদী পাড় ঘেষে বালু উত্তোলণ, পরিবহনের জন্য দানবের মতো ট্রলার চলাচল করায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

ভাঙন কবলিত চিতুলিয়াপাড়ার যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে পাইপ দিয়ে তোলা হচ্ছে বালু

স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যমুনা নদীতে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হলেও প্রতিবাদ করা যায় না। শুষ্ক মৌসুমী এসব বালু খেকোরা যমুনার জেগে উঠা চর কেটে বিক্রি করা শুরু করবে। অনেক জমির মালিক কিছু টাকার লোভে বালু ব্যবসায়ীদের কাছে জমি ইজারা দিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। আবার কেউ জমি না দিলে জোর করেই জমি দখল করা হয়। প্রশাসনও বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নে বৈধ ও অবৈধ বালুর ঘাটগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যানরা। ওই দুই ইউনিয়নে প্রায় ২৫টি বালুর ঘাট রয়েছে। কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে এসব বালুর ঘাট পরিচালনা হয়। ঘাটপ্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা করে চাঁদা দিতে হয় ঘাট মালিকদের। এইসব টাকা ব্যয় ধরা হয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলের জন্য। এই কনসোর্টিয়ামের কমিটিতে রয়েছে ক্ষমতাসীন চলের শীর্ষ নেতারাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার বলেন, ‘যমুনা নদীর ভাঙনে ইতোমধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে। এতে নদী পাড়ের মানুষজন অসহায় হয়ে পড়েছে সবর্স্ব হারিয়ে। আরো শতাধিক পরিবার ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে। ভাঙন এখনও অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু অংশে জিওব্যাগ ফেলেছিল ভাঙনরোধে। যেখানে ভাঙন শুরু হয়েছে সেখানে এখনও ভাঙন রোধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। অতিদ্রুত তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ইশরাত জাহান বলেন, ‘যমুনা নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন রোধের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ বালু ঘাট বা মহলের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’

টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে ভাঙনের বিষয়টি জানা নেই। সেখানে ভাঙন শুরু হলে সেটি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কাওছার/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়