ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সিগারেটের আগুনে পুড়িয়ে ও শরীরে সুই দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৩, ২৮ অক্টোবর ২০২২  
সিগারেটের আগুনে পুড়িয়ে ও শরীরে সুই দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ

নির্যাতনের শিকার জাকির হোসেন।

লক্ষ্মীপুরে মিথ্যা অপবাধে জাকির হোসেন নামে এক শিশুকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে প্লাস দিয়ে চামরা টেনে সিগারেটের আগুনে ক্ষত-বিক্ষত করে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া শিশুটির শরীরে সুই ঢুকিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ঘটনার চার দিনেও চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে হাসপাতালে আসতে দেয়নি অভিযুক্তরা। 

এদিকে ওই ঘটনায় শিশুর বাবা আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামি করে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী (সদর) আদালতে মামলা করেছেন। আদালতের বিচারক তারেক আজিজ মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য লক্ষ্মীপুর সদর মডলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। 

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মঞ্জুর আহমেদ তিতু। 

মামলার আসামিরা হলেন- সদর উপজেলার চররমনী ইউনিয়নের চর রমনী গ্রামের মৃত আবদুর রশিদের ছেলে গোরফান ও তার ছেলে দেলোয়ার হোসেন, বাদশা মিয়ার ছেলে মনির হোসেন, আবুল কালাম ফরাজির ছেলে মনির, কালাম ভূঁইয়ার ছেলে মাকছুদ আলম ও মৃত মজিবুল হকের ছেলে শাহ আলম।

মঞ্জুর আহমেদ তিতু বলেন, ওই ঘটনায় গত বুধবার আদালতে মামলা হয়েছে। শিশুটিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন চালানো হয়। আলামত মুছে ফেলতে হাসপাতালে ভর্তি না করে চারদিন শিশুটিকে বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখেন আসামিরা। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, শিশু জাকিরের বাবা আলমগীরের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আসামিদের পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। ওই বিরোধের জেরে মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সকালে পূর্বে পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে অভিযুক্ত শাহ আলমের ঘরে শিশু জাকিরকে নির্যাতন করা হয়। এসময় জাকিরকে চেয়ারের সঙ্গে হাত-পা বেঁধে মারধর করে দেলোয়ার, গোরফান, মনির হোসেন, মনির, মাকছুদ ও শাহ আলম। অভিযুক্ত দেলোয়ার ও তার বাবা গোরফান শিশু জাকিরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্লাস দিয়ে টেনে সিগারেটের আগুনে ক্ষত-বিক্ষত করে নির্যাতন চালায়। শুধু তাই নয় আসামিরা শিশুটির হাতের আঙুলে সুই দিয়ে জখম করে এবং শ্বারোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। পরে শিশুটির চোখে মরিচের গুড়া দিয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করে অভিযুক্তরা। 

এরই এক পর্যায়ে স্থানীয়দের সহযোগীতায় ঘটনাস্থল থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু আসামিদের বাধার কারণে জাকিরকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনতে পারেননি পরিবারের লোকজন। পরে ঘটনার ৫দিনের মাথায় শিশুটি গোপনে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।

শিশু জাকিরের বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘নির্যাতনের পর চিকিৎসা ছাড়াই ৪ দিন বাড়িতে অরুদ্ধ করে রাখা হয় আমার সন্তানকে। এখন মামলা করায় আমাদের প্রাণে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এমনকি আমার ছেলের হাতের মোবাইল ফোনটিও নিয়ে গেছে আসামিরা। আমি সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’ 

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।  

লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি মোসলেহ উদ্দিন জানান, আদালত থেকে মামলাটি তদন্তের জন্য থানায় দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সঠিক তদন্ত শেষে পুনরায় আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

জাহাঙ্গীর লিটন/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়