ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

খেঁজুর রস আহরণে গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত গাছিরা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৪, ৬ নভেম্বর ২০২২  
খেঁজুর রস আহরণে গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত গাছিরা

দুয়ারে কড়া নাড়ছে শীত। এরই মধ্যে সাতক্ষীরা জেলায় গাছিদের মধ্যে শুরু হয়েছে খেঁজুর রস সংগ্রহের তোড়জোড়। এখনও শীত জেঁকে না বসলেও জেলার সবখানে খেঁজুর গাছ প্রস্তুত করা হচ্ছে।

মাঠের আইলে, রাস্তার পাশে, পুকুরপাড়ে অযত্নে বেড়ে ওঠা খেঁজুর গাছ থেকে শীত মৌসুমে জেলার কয়েক হাজার গাছি রস-গুড় উৎপাদন করে। এতে তারা যে অর্থ উপার্জন করে তাতে তাদের বছরের অর্ধেক সময়ের জীবিকার ব্যবস্থা হয়।

আরো পড়ুন:

বিভিন্ন কারণে খেঁজুর গাছ কমে গেছে। আগে যেমন কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা উপজেলার প্রায় প্রতিটি ঘরে রস-গুড় উৎপাদন হতো, এখন কৃষক খেঁজুর রস উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অধিক পরিশ্রমের হওয়ায় নতুন প্রজন্মের কৃষকের মধ্যে রস-গুড় উৎপাদনে তেমন আগ্রহ নেই। এর ফলে খেঁজুর গাছ থাকলেও গাছির সংকটে সব গাছ উৎপাদনে নেওয়া হয় না।

শীত এলে গাছিরা প্রস্তুতি নেন। খেঁজুর গাছের উপরিভাগের নরম অংশে কিছুটা কেটে বা চেঁছে রস নামানো হয়। গাছ সাধারণত পূর্ব ও পশ্চিম দিক করে কাটা হয়, যাতে সূর্যের আলো সরাসরি ওই কাটা অংশে পড়তে পারে। একবার গাছ কেটে ২-৩ দিন রস পাওয়া যায়।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ী গ্রামের গাছি ইউনুচ আলী জানান, শীতকালে আগে শহর থেকে মানুষ দলে দলে আসতো খেজুর রস খেতে। সন্ধ্যায় গ্রামীণ পরিবেশ খেঁজুর রস কেন্দ্র করে জমে উঠতো। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সেই সময়ে। এখন আর তেমন লক্ষ্য করা যায় না। তবে খেঁজুরের গুড়ের চাহিদা রয়েছে। দামও ভালো পাওয়া যায়।

একই এলাকার সুমন বিশ্বাস জানান, তিনি এবার ১০০ খেঁজুর গাছ প্রস্তুত করেছেন রস নেওয়ার জন্য। দুই-তিন মাসের রস-গুড় বিক্রির অর্থ দিয়ে তার বছরের ৫/৬ মাস সংসার চলে।

তিনি আরও জানান, খেঁজুর গাছ প্রস্তুত করার পর খেঁজুরের যে পাতা পেয়েছেন, সেগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি আকর্ষণীয় ও মজবুত পাটি তৈরি করবেন। এগুলো বাজারে বিক্রি করে বাড়তি অর্থ আয় করার কথা জানান তিনি।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার গাছি আমিনুর রহমান জানান, বর্তমানে যে হারে খেঁজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে, তাতে এক সময় হয়ত এলাকায় গাছ দেখা যাবে না। এলাকার ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাইলে কৃষকের বেশি করে খেঁজুর গাছ লাগানো এবং তা পরিচর্যা করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপপরিচালক কৃষিবিদ ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন বলেন, কৃষি অফিস থেকে গাছিদের মাঠপর্যায়ে খেঁজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও ভালোমানের লালি বা গুড় উৎপাদনের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বেশি বেশি খেঁজুর গাছ রোপণ করলে এর চাষ বাড়ানো সম্ভব। একই সঙ্গে গাছিদের প্রশিক্ষণ ও স্বল্পসুদে ঋণ সহায়তা দিয়ে রস আহরণে উৎসাহিত করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। 
 

শাহীন/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়