ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

অবশেষে বরখাস্ত হলেন সেই ২ শিক্ষক

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৪, ১০ জানুয়ারি ২০২৩  
অবশেষে বরখাস্ত হলেন সেই ২ শিক্ষক

চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হয়েও সরকারি চাকরিতে কর্মরত ছিলেন খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দুই শিক্ষক। মামলা এবং কারাবাসের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে সব কিছু ম্যানেজ করে নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু সম্প্রতি রাইজিংবিডিডটকম-এর অনুসন্ধানে ফাঁস হয় প্রায় ধামাচাপা পড়ে যাওয়া চাঞ্চল্যকর এই তথ্য। প্রকাশ করা হয় সচিত্র প্রতিবেদন। যার জের ধরে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ফারুক শেখ ওরফে মো. ফারুক ইসলাম এবং তার ভাই আবুল কালাম শেখ।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কারাবাসের দিন থেকে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এখন থেকে তারা সাময়িক বরখাস্তকালীন পর্যন্ত অর্ধেক বেতন প্রাপ্ত হবেন। আর মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে কারাবরণের দিন অর্থাৎ চার বছর আগে থেকে উত্তোলনকৃত বেতনের অর্ধেক ফেরত দিতে হবে। এছাড়া বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

গত ২ জানুয়ারি জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল রাইজিংবিডিডটকম-এ ‘হত্যা মামলার চার্জশিটভূক্ত আসামি যখন শিক্ষক!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।

আলোচিত শিক্ষক মো. ফারুক ইসলাম ও আবুল কালামের বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাট ইউনিয়নের পদ্মবিলা গ্রামে। তারা ওই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক শেখের ছেলে। এর মধ্যে ফারুক ইসলাম সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন উপজেলার ১৫ নম্বর হাজীগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর তার ভাই আবুল কালাম কর্মরত আছেন একই উপজেলার ২২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে। তারা দুজনই একই হত্যা মামলার এজাহার ও চার্জশিটভুক্ত আসামি।

গত ৪ জানুয়ারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আলাদা দুটি অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, সহকারী শিক্ষক মো. ফারুক ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম শেখের বিরুদ্ধে দিঘলিয়া থানায় ২০১২ সালের ২৩ আগস্ট মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় পুলিশ কর্তৃক ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে তারা গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করায় তাদের ওই তারিখ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১২ সালের ২০ আগস্ট দিঘলিয়া উপজেলার পদ্মবিলা গ্রামের ওলিয়ার মুন্সিকে (৩০) পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার তিন দিন পর ২৩ আগস্ট নিহতের কন্যা দোলেনা বেগম বাদী হয়ে ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে দিঘলিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মো. ফারুক ইসলামকে ১৩নং এবং তার ভাই আবুল কালামকে ১৪নং আসামি করা হয়। পরবর্তীতে দিঘলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. আলী নওয়াজ, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পরিদর্শক মো. মামুনুর রশিদ, সিআইডি পরিদর্শক প্রবীর কুমার বিশ্বাস এবং সর্বশেষ খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলাটি বর্তমানে খুলনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। 

আলোচিত এ হত্যা মামলার সব অভিযোগপত্রে শিক্ষক ফারুক ও তার ভাই কালামের নাম আছে। 

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, শিক্ষক ফারুক ইসলাম ও আবুল কালাম উল্লিখিত মামলায় ২০১৮ সালে ৩৮ দিন খুলনা জেলা কারাগারে ছিলেন। 

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দিঘলিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহনাজ বেগম বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নির্দেশনা তিনি সোমবার (৯ জানুয়ারি) হাতে পেয়েছেন এবং ওই দিন থেকে আদেশ কার্যকর করেছেন।

খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, শিক্ষক ফারুক ইসলাম ও আবুল কালামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হত্যা মামলার কপি এবং কারাগারে থাকার প্রমাণপত্র চেয়ে দিঘলিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পাওয়ার পর তাদের সামরিক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে। আর হত্যা মামলায় তারা দুই বছরের অধিক সাজাপ্রাপ্ত হলে চাকরি থেকে স্থায়ী বরখাস্ত করা হবে। 
 

/বকুল/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ