ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

শিক্ষকদের বৌভাতে অংশগ্রহণ: প্রধান শিক্ষকরা নিজ ক্ষমতায় স্কুল বন্ধ রাখেন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২০, ১০ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ২১:২১, ১০ জানুয়ারি ২০২৩
শিক্ষকদের বৌভাতে অংশগ্রহণ: প্রধান শিক্ষকরা নিজ ক্ষমতায় স্কুল বন্ধ রাখেন

কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয় একযোগে বন্ধ রেখে শিক্ষকেরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের ছেলের বৌভাতের দাওয়াত খেতে যাওয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। 

সরকারি ছুটির দিন ছাড়াই এভাবে তিন উপজেলায় ২৬৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার বিষয়টি উচিত হয়নি বলে মনে করেন অনেকে। রোববার (৮ জানুয়ারি) রৌমারীস্থ বাসভবনে প্রতিমন্ত্রীর একমাত্র ছেলে সাফায়েত বিন জাকির সৌরভের বিবাহত্তোর বৌভাত অনুষ্ঠান হয়।

টানা শীতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাওয়া ও শিশুরা ডায়রিয়াসহ নানা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে প্রধান শিক্ষকরা তাদের ক্ষমতা বলে ওই দিন বিদ্যালয় বন্ধ রেখেছিলেন বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা বিভাগ।

বৌভাত অনুষ্ঠানে তিন উপজেলার এক হাজারেরও বেশি শিক্ষকসহ ১০ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। বিয়েতে ১৫টি গরু, ৭টি খাসি ও মুরগীর মাংসের আয়োজন ছিল। কিন্তু লোকসমাগম বেশি হওয়ায় অনেককে না খেয়ে ফিরতে হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়েতে বিদ্যালয় বন্ধ রেখে শিক্ষকদের দাওয়াতে যাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর আর মুখ খুলছেন না কোনো শিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জেলার চিলমারী, রৌমারী ও রাজিব উপজেলা নিয়ে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এ কারণে এই তিন উপজেলার সকল প্রাথমিক শিক্ষকদের ছেলের বিয়েতে দাওয়াত দেওয়া হয়। দাওয়াতে তিন উপজেলার শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষকদের পাশাপাশি অন্যান্য কর্মকর্তারা অংশ নেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিলমারী উপজেলার কয়েকজন সহকারী শিক্ষক জানান, বৌভাতের অনুষ্ঠান সরকারি ছুটির দিনে করলে ভালো হতো। তাহলে আর এত সমালোচনা হতো না। তাছাড়া বিদ্যালয় বন্ধ রেখে বিয়ের দাওয়াতে যাওয়া বিষয়টিও ঠিক হয়নি বলে জানান তারা। 

কুড়িগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠন দুলাল বোস বলেন, ‘যে কেউ দাওয়াতে যেতেই পারেন। তাতে খারাপ কিছু দেখি না। তবে একযোগে এতগুলো বিদ্যালয় বন্ধ রেখে যাওয়াটা দৃষ্টিকটু হয়েছে। এটা জরুরি ছিল না।’ 

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ মন্তব্য করতে চাননি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিজেও বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছি। তবে বিদ্যালয় বন্ধ রাখার বিষয়টি ছিল প্রধান শিক্ষকদের ক্ষমতা বলে। প্রধান শিক্ষকরা অব্যাহত শীত ও কনকনে ঠান্ডার কারণে নিজ ক্ষমতা বলে রোববার (৮ জানুয়ারি) বিদ্যালয় বন্ধ রেখেছিলেন। তারা এ রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগে বছরে তিন দিন বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে পারেন। এতে আমাদের করার কিছু নেই।’ 

এ বিষয়ে কথা বলতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বা তার নিকটতম আত্মীয় কেউ ফোন রিসিভ করেননি। 
 

সৈকত/বকুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়