ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

‘টানাহেঁচড়া করায়’ পুলিশের সামনেই নারীর বিষ পান 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৯, ২৪ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৭:৫৩, ২৪ জানুয়ারি ২০২৩
‘টানাহেঁচড়া করায়’ পুলিশের সামনেই নারীর বিষ পান 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় মাদক কারবারের অভিযোগে এক নারীকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পুলিশ দীর্ঘক্ষণ ‘টানাহেঁচড়া’ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবার। একপর্যায়ে পুলিশের সামনেই ওই নারী কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় সটকে পড়েন পুলিশ সদস্যরা।

গতকাল সোমবার রাত ১১টার দিকে ওই নারীকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের দাবি, ওই নারী মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সাল থেকে একটি মাদকের মামলা আছে। গতকাল উপজেলার একটি জমি থেকে ২০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। সেই মাদকের মালিক ওই নারী ও তাঁর স্বামী। 

তবে ভুক্তভোগী নারীর পরিবারের সদস্যদের দাবি, তিনি মাদক করবারি নন।

স্থানীয় লোকজন, ওই নারীর পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় আখাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোবারক আলী ও সহকারী উপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল আজিজ পুলিশের নারী সদস্যসহ ৮ থেকে ১০ জন পুলিশ ওই নারীর বাড়িতে যান। এ সময় পুলিশ সদস্যরা নারীকে মাদক কারবারি আখ্যা দিয়ে থানায় নেওয়ার জন্য টানাহেঁচড়া শুরু করেন। আটকের কারণ জিজ্ঞাসা করলে এএসআই আজিজ বলেন, ওসি তাকে (নারী) থানায় নিয়ে যেতে বলেছেন। টানাহেঁচড়ার একপর্যায়ে পুলিশের সামনেই ঘরে থাকা কীটনাশক পান করেন ওই নারী। এ সময় পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।

পরে স্বজনেরা ওই নারীকে উদ্ধার করে প্রথমে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। সেখানে আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুল ইসলামসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাত ৮টার দিকে ওই নারীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাত ১১টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঢাকায় নেওয়ার সময় ওই নারীর সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন- আখাউড়া থানার এসআই আবদুল সালেক। 

আবদুল সালেক বলেন, ওই নারী মাদক কারবারি। ওসি স্যার আমাকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। চিকিৎসকেরা ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি।

আখাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান বলেন, রোগীর রক্তচাপ অনেক কমে গিয়েছিল। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক আবদুল মোনেম বলেন, ওই নারীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

কীটনাশক পান করা নারীর মা বলেন, আমার মেয়েকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ৮ থেকে ১০ জন পুলিশ সদস্য বাড়িতে আসেন। তারা ওসির কথা বলে আমার মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানাহেঁচড়া শুরু করেন। অপমান সইতে না পেরে পুলিশের সামনেই বিষ পান করে আমার মেয়ে। 

তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের সামনে বিষ পান করলেও কেউ তাকে ফেরাতে আসেনি। বরং পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে সরে পড়েন। আমার মেয়ের নামে কোনো মামলা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই। পুলিশ শুধু শুধু এ কাজ করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই নারীর সঙ্গে পুলিশের এক সদস্য আছেন। তার অবস্থা এখন ভালো।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল বিকেলে একটি জমি থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ২০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এগুলোর মালিক ওই নারী ও তার স্বামী এ বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। ওই নারী মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে মাদকের মামলা রয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই।’ 

পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ওসি বলেন, ‘আগে ওই নারী সুস্থ হোক। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাইনুদ্দীন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়