ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বখাটের উৎপাত, মেধাবী মীমের স্কুলে যাওয়া বন্ধ  

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১১:৫২, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩
বখাটের উৎপাত, মেধাবী মীমের স্কুলে যাওয়া বন্ধ  

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সিংদাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী তাসনিম কবির মীম। তার ক্লাশ রোল-১। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পেয়েছে মীম। মাস দু’য়েক পরেই শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। তবে স্থানীয় এক বখাটে ও তার পরিবারের সদসদ্যের কারণে এখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন মীম। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ। 

বখাটে ও তার পরিবারের হুমকি-ধমকিতে ভয়ে নাকাল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মীমের অভিভাবককে  মীমকে বিদ্যালয়ে না পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছে প্রধান শিক্ষকও। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার শরনাপন্ন হয়েছে মীম। 

আরো পড়ুন:

মৌলিক অধিকার শিক্ষা প্রাপ্তির দাবিতে আবেদন পত্র জমা দিয়েছেন তিনি। 

এদিকে এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী ও মীমের সহপাঠীরাও। তবে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার উপায় নেই কারও। তবে বিদ্যালয় ও তার আশপাশের এলাকা বখাটে মুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন অভিভাবকরা।  

জানতে চাইলে মীম বলেন, ‘বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথে স্থানীয় কুরাইশি ইমন এবং তার আত্মীয়-স্বজনরা আমাকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করে। কুপ্রস্তাব দেয় ইমন। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। এমনকি ইমনের পরিবারের লোকজন আমাকে উঠিয়ে নেওয়ার হুমকি দেয়। এসব বিষয়ে গ্রামবাসী ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবগত রয়েছেন। তবে কেউ তাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয়নি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ইমন ও তার পরিবারের নিকট অসহায় গ্রামবাসী। বাধ্য হয়েই নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর শিক্ষা প্রাপ্তির অধিকার দাবিতে আবেদনপত্র জমা দিয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী শিক্ষাকে গুরুত্ব দেন। আশা করছি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে থেকে যথাযথ সহায়তা পাবো।’ 

সিংদাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. রকিব মিয়া, দিপালী আক্তারসহ একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত মীম। একজন বখাটের ভয়ে তার শিক্ষা জীবন থেমে যেতে পারে না। সে খুবই মেধাবী। আমরা চাই মীম আবার নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসুক এবং সে তার পড়াশুনা চালিয়ে যাক। 

মীমের মা লতিফা আক্তার বলেন, ‘আমি সিংদাইর সহিদুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। একই চত্বরে অবস্থিত প্রাইমারি ও হাই স্কুল। এরপরও আমার মেয়েকে আমি স্কুলে নিয়ে আসতে পারছি না। একজন বখাটে ও তার পরিবারের জন্য আজ আমার মেয়ের পড়াশুনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীমকে স্কুলে না পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন। এতে আমি আরও ভয়ে আছি।’

সিংদাইর মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কুরাইশি ইমনের মা জাহেদা বেগম বলেন, ‘মীম আমার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে স্কুলে যায়। আমার ছেলে আমার বাড়ির সামনে অবাধ চলাচল করবে এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া বাড়ির পাশেই হাই স্কুল। সেখানে সে খেলাধুলা করে। মীমকে আমার ছেলে কোনোভাবেই বিরক্ত করে না।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী বলেন, জেলার একদম বর্ডারে অবস্থিত সিংদাইর গ্রাম। যোগাযোগ ব্যবস্থার হয়নি তেমন উন্নয়ন। যে কারণে এখানে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিও খানিকটা কম। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় হেরোইন ও ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক। এসব মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে গ্রামের কিশোর ও যুবকরা। অচিরেই এসব অবস্থার পরিত্রাণ দাবি জানান তারা। 

সিংদাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মীম খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী। বখাটের উত্যক্তে তার স্কুলে আসা বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করেই আমি মীমকে কয়েকদিন স্কুলে না পাঠানোর জন্য তার মাকে বলেছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যালয় আঙ্গিনায় মীম পুরোপুরি নিরাপত্তায় থাকলেও রাস্তাঘাটের নিরপত্তার বিষয়টি চিন্তা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

মাসুদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়