ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

একই স্কুলে পড়ে ১০ জোড়া জমজ ভাই-বোন

মঈনুদ্দীন তালুকদার হিমেল, ঠাকুরগাঁও || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৪, ২১ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ২২:০৫, ২১ মার্চ ২০২৩
একই স্কুলে পড়ে ১০ জোড়া জমজ ভাই-বোন

জমজ ভাই-বোনরা

ভাই-বোনের সম্পর্ক মধুর হয়৷ একসঙ্গে বেড়ে ওঠা আর খুনসুটি করে পার হয়ে যায় জীবনের অনেকটা সময়। তবে সেই সম্পর্ক আরও মধুর হয়ে ওঠে যমজ ভাই-বোনদের ক্ষেত্রে।

একই সময়ে পৃথিবীতে আলোর মুখদেখা, একই রকম দেখতে— আকৃষ্ট করে সকলকে। একসঙ্গে খাওয়া, খেলাধুলা, পড়াশোনা, ভালো লাগার বিষয়টি মুগ্ধতা ছড়ায় আশপাশে। একসঙ্গে এক বিদ্যালয়ে ১০ জোড়া যমজ ভাই-বোন পড়াশোনা করছে, বিষয়টি বিরল৷ তবে এটি ঘটেছে ঠাঁকুরগাঁওয়ে। একসঙ্গে একই বিদ্যালয়ে এত যমজ ভাই-বোন পড়াশোনার বিষয়টি আলোড়ন ফেলেছে জেলাজুড়ে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মথুরাপুর পাবলিক হাই স্কুলে একসঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়াশোনা করে ২০ জন যমজ ভাই-বোন। বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে তাহসিন ও তাসনিম, সান ও মুন; সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে কার্তিক ও গণেশ, হাবিব ও হাফিজ এবং সুমাইয়া ও সাদিয়া; অষ্টম শ্রেণিতে শুভ ও সৌরভ; নবম শ্রেণিতে হাসি ও খুশি, তাহবি ও তাসবি এবং দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে আবিদ ও অমিত এবং রাহুল রাহা ও চঞ্চল রাহা। তারা যমজ ভাই বোন৷

যমজ ভাই-বোনদের চেহারায় মিল থাকায় তাদের চিহ্নিত করতে খানিকটা বিড়ম্বনা হলেও বিষয়টা উপভোগ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহপাঠীরা। দুইজন একসঙ্গে বেড়ে ওঠাকে মজার সঙ্গে দেখছেন যমজ ভাই-বোনেরা।  

ষষ্ঠ শ্রেণির যমজ দুই ভাই সান ও মুন বলেন, ‘আমরা দুই ভাই একসঙ্গে খাওয়া, খেলাধুলা ও স্কুলে আসা-যাওয়া করি৷ আমাদের দুই জনের পছন্দ মাংস ও ভাত৷ শুধু দু্ই জনের দুই রঙ পছন্দ৷ একজনের লাল, আরেকজনের নীল। আমরা একই পোশাক পরে বিভিন্ন জায়গায় যায়। শুধু পোশাক না; আমাদের জুতা, চশমা, প্যান্ট সব একইরকম। এসব আমাদের খুব ভালো লাগে৷ তবে আমরা কে কোনটা, তা অনেকে চিনতে পারেন না। আমরা এ বিষয়টা আরও বেশি উপভোগ করি।’

সপ্তম শ্রেণির যমজ দুই বোন সুমাইয়া ও সাদিয়া বলেন, ‘সব কাজ আমরা একসঙ্গে করি। দুই জনের প্রিয় রঙ হলো নীল। আমরা একসঙ্গে স্কুলে আসি। একসঙ্গে ক্লাসে বসি৷ টিফিনের সময় একসঙ্গে খেলাধুলা করি। সব কাজগুলো আমরা একসঙ্গে করি৷ ক্লাসে একজনের বকা দিলে দুই জনের খুব খারাপ লাগে৷ আবার কেউ যদি আমরা ভালো কিছু করি, তাহলে দুই জনের মন থেকে ভালো লাগা কাজ করে৷ স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীরা আমাদের চিনতে ভুল করে। তখন একসঙ্গে দুজনকে ডাকে, আমরা মজা পাই।’

নবম শ্রেণির যমজ দুই বোন হাসি ও খুশি বলেন, ‘আমাদের কেউ কোনো ভুল করলে না চিনতে পেরে আরেক জনকে দোষ দেয়। পরে অবশ্য বিষয়টা খোলসা হয়। পরিবারের কাছে, আত্নীয়-স্বজনের কাছে, শিক্ষকদের কাছে আমরা আদর পাই৷ আমরা পুরো সময়টা একসঙ্গে কাটায়। আমরা জমজ হয়ে অনেক খুশি।’ 

সুমাইয়া-সাদিয়া, হাবিব-হাফিজ, তাহবি-তাসবিসহ অন্য যমজ ভাই-বোনরা একই অভিমত ব্যক্ত করে। 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘যমজ বিষয়টি আমি বেশ উপভোগ করি৷ তারা যখন পাশাপাশি বসে, তখন তাদের দেখতেও ভালো লাগে। তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বেশি। তারা যাতে ভালো কিছু করতে পারে, সেই বিষয়ে আমরা তাদের উৎসাহিত করি।’  

মথুরাপুর পাবলিক হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে ২০ জন যমজ ভাই-বোন পড়াশোনা করে৷ তাদের নামগুলো একইরকম ও চেহারাও। সেই কারণে কোনটা কে, সেটা বুঝতে মাঝে মাঝে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তবুও আমরা যমজ বিষয়টি উপভোগ করি।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি লক্ষ্য করেছি, তাদের মেধাও প্রায় সমান৷ একজনের শ্রেণির রোল দুই হলে, অপরজনের তিন। তাদের আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ একইরকম৷ তারা একসঙ্গে থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। আমার আশা করছি, তারা সকলে ভালো কিছু করবে।’
 

/বকুল/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়