ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

স্থপতি ইমতিয়াজ চ্যাটিং অ্যাপ থেকে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ২৮ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ২১:৩৯, ২৮ মার্চ ২০২৩
স্থপতি ইমতিয়াজ চ্যাটিং অ্যাপ থেকে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার

একটি আন্তর্জাতিক চ্যাটিং অ্যাপের মাধ্যমে আলিফের সঙ্গে পরিচয় স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার। এই অ্যাপে যোগাযোগের মাধ্যমেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। গত ৭ মার্চ ইমতিয়াজ ফোন করলে আলিফ তাকে কলাবাগান ক্রিসেন্ট রোডে আরাফাতের বাসায় যেতে বলেন। সেখানে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে হত্যা করা হয়। আলিফ ও আরাফাত ব্ল্যাকমেইলিং করে ইমতিয়াজের কাছ থেকে টাকা আদায় করছিল। 

ইমতিয়াজ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল মামুন এসব তথ্য জানান। মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন তিনি।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার আরও জানান, ইমতিয়াজ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- মিল্লাদ হোসেন মুন্না (১৯), আনোয়ার হোসেন (৩৮) ও এহসান ওরফে মেঘ (২৩)।

এসময় তাদের কাছ থেকে হত্যার পর লাশ বহনের কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা প্রাইভেট কার (টয়োটা কারিনা) উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার বলেন, গত ৭ মার্চ রাজধানীর কলাবাগান থানাধীন ক্রিসেন্ট রোড এলাকা থেকে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়া নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় পরের দিন ৮ মার্চ কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে ভুক্তভোগীর পরিবার। ওই দিনই মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানার চিত্রকোট ইউনিয়নের কামারকান্দা গ্রামের নবাবগঞ্জ হাইওয়ে রোডের পাশের ঝোপ থেকে ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরের দিন সিরাজদিখান থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। 

হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরাফাত ফয়সাল আহমেদ রাহাত ওরফে হৃদয়, মিল্লাত হোসেন মুন্না, আলিফ, এহসান ওরফে মেঘ ও আনোয়ার হোসেনকে শনাক্ত করে অভিযান শুরু করে পুলিশ।

এদের মধ্যে ২৬ মার্চ সিরাজগঞ্জ থেকে মিল্লাত হোসেন মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার কলাবাগান এলাকা থেকে আনোয়ার হোসেন ও এহসান ওরফে মেঘকে গ্রেপ্তার করে ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিম।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আসামিরা সমকামী এবং হিজড়া। তারা একটি চ্যাটিং অ্যাপের মাধ্যমে পূর্ব থেকে সমকামী বিভিন্ন লোকজনকে রুম ডেটের কথা বলে টার্গেট করে। তাদের বিভিন্ন বাসায় ডেকে নিয়ে নানা কায়দায় ব্ল্যাকমেইল করে টাকা-পয়সাসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে আসছিল।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানান, ইমতিয়াজ ওই দিন কলাবাগানের ওই বাসায় যান। পরে আলিফের সঙ্গে একান্তে একটি রুমে ছিলেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আলিফের সহযোগী আরাফাত, মেঘ, মুন্না ও আনোয়ার রুমে প্রবেশ করে ভিকটিমকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। এরপর তার কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা ইমতিয়াজের বুকে, পিঠে আঘাতসহ প্রচণ্ড মারধর করে। এতে তার মৃত্যু হয়।

ইমতিয়াজের মৃত্যু নিশ্চিত হলে আসামিরা পরিকল্পনা করে সুকৌশলে বাসা থেকে তার মৃতদেহ নামিয়ে মেঘের প্রাইভেট কারে উঠিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানা এলাকার কামারকান্দা গ্রামের নবাবগঞ্জ হাইওয়ে রোডের পাশে ঝোপে ফেলে দিয়ে আসে। পরে আলিফকে বাসাবো, আনোয়ারকে গ্রিন রোডে নামিয়ে দেয়। এরপর আরাফাত, মেঘ, মুন্না  প্রথমে নারায়ণগঞ্জ, পরে চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লা হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যায়।

ভারতে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে তারা পালিয়ে আবার একই পথে বাংলাদেশে ফিরে আসে। এরপর ডিবি পুলিশের অভিযানে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার হয়।

রতন/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়