লক্ষ্মীপুরে জাপার পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাক, উত্তেজনা
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
লক্ষ্মীপুরে জাতীয় পার্টির দুই ইউনিটের নেতাকর্মীরা পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাক দিয়েছে। একই স্থানে সমাবেশ ডাকায় উত্তেজনা বিরাজ করেছে পুরো শহর জুড়ে। বুধবার (১০ মে) সকাল ১০টার দিকে জেলা শহরের টাউন হল ও টাউন হল চত্বরে সমাবেশের ডাক দেন সদর উপজেলা জাতীয় পার্টি এবং পৌর জাতীয় পার্টি।
এদিকে, সমাবেশ স্থলেই পাশেই লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। সেখানে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র রয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যেই সভা সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও টাউন হল কেন্দ্রীক জাতীয় পার্টির সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা ও পৌর জাতীয় পার্টির একাংশের নেতাকর্মীরা ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ উল্যাহর। সম্মেলনের আয়োজন করেছে সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক পরিচয়দানকারী এ কে এম জাহাঙ্গীর ও পৌর জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ জিয়াউল হুদা আফলু।
অন্যদিকে, সদর উপজেলা ও পৌর জাতীয় পার্টির ব্যানারে টাউন হল চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে অপর পক্ষ। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকায় ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, লক্ষ্মীপুরে জাতীয় পার্টির অতীতের পোগ্রামগুলোকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে হট্রগোল হতো। ২০২১ সালের ১৩ মার্চ লক্ষ্মীপুরে জাতীয় পার্টির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত ১৩ মার্চ দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের ওয়েলকাম চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছয়জন আহত হন। এ সময় রেস্টুরেন্টে মূল্যবান মালামাল ভাঙচুর করে নেতাকর্মীরা। এখন আবার দু’পক্ষ পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকায় আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
সদর উপজেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এম আরিফুর রহমান ও সদস্য সচিব মুহা. জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়কের স্বেচ্ছাচারিতা, সমন্বয়হীনতা এবং অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা টাউন হল চত্বরে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছি। আমরা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছি।
টাউন হলের ভেতরে আরেকাংশের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা দুইজন উপজেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব। জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ উল্যাহ এবং সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান মাহমুদ ৫১ সদস্য বিশিষ্ট সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু সম্মেলনের বিষয়ে আমরাই জানি না। স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তারা সম্মেলনের আয়োজনের ব্যবস্থা করেছে। সম্মেলনের আয়োজক একেএম জাহাঙ্গীর সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য। সদস্য হয়ে তিনি কিভাবে সম্মেলনের আয়োজন করেন?
বুধবার অনুষ্ঠিতব্য ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আয়োজক একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, এম আরিফ এবং মুহা. জাহাঙ্গীর হোসেনের কমিটির কোনো বৈধতা নেই। আমিই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক। তাই সম্মেলনের আয়োজন করেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, এম আরিফুর রহমান এবং মুহা. জাহাঙ্গীর হোসেন সদর উপজেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির কোনো দায়িত্বে নেই। যে কমিটি তারা দেখাচ্ছেন, সেটি আমি অনুমোদন দেইনি। আমরা ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করেছি। প্রশাসনের সব দপ্তর থেকে আমরা অনুষ্ঠানের অনুমোদন নিয়েছি। কারা এবং কেন টাউন হলের বাহিরে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে, তা আমাদের জানা নেই। সম্মেলনকে বানচাল করার জন্য কেউ হয়তো সভা ডাকতে পারে। সেটা প্রশাসন দেখবে।
তবে জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মাহমুদুল রহমান মাহমুদ বলেন, সদর উপজেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি নিয়ে কিছু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। দ্রুত সমস্যা নিরসন করা হবে।
লক্ষ্মীপুর পাবলিক লাইব্রেরি ও টাউন হলের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মো. মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, জাতীয় পার্টির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন করার জন্য একটি পক্ষ আমাদের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছে এবং ভাড়াও পরিশোধ করেছে। বাইরে প্রতিবাদ সমাবেশের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।
লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন করার জন্য একপক্ষ আগেই অনুমোদন নিয়েছে। এখন আরেক পক্ষ বাইরে প্রতিবাদ সভা ডেকেছে বলে শুনেছি। কেন ডেকেছ- তা জানতে দুই পক্ষকে ডাকা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, কেউ সভা সমাবেশের নামে আইনশৃঙ্খলা অবনতি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাহাঙ্গীর/ মাসুদ
আরো পড়ুন