ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ওসি কৃপা সিন্ধুর বিচারের দাবিতে বগুড়ায় ধর্ষিতার মায়ের অবস্থান কর্মসূচি

বগুড়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ২০:৪৬, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ওসি কৃপা সিন্ধুর বিচারের দাবিতে বগুড়ায় ধর্ষিতার মায়ের অবস্থান কর্মসূচি

বগুড়া ধুনট থানার সাবেক ওসি কৃপা সিন্ধু বালাকে ধর্ষণ মামলার মূল চার্জশিটে আসামি করার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ধর্ষিতার মা। 

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকার একটি দেয়ালে এবং হাতে ব্যানার নিয়ে তিনি এই কমূর্সচি পালন করেন। এসময় ওই মায়ের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা ছিলো, ‘দোষী সাব্যস্থ ওসি কৃপা সিন্ধু বালাকে আসামি করা হবে না কেন? পিবিআই প্রধান, বনজ কুমার মজুমদার জবাব চাই’।

আরো পড়ুন:

আরও পড়ুন: ওসির উপস্থিতিতে হিটলু হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ

মামলার বাদী স্কুলছাত্রীর মা বলেন, মামলার শুরু থেকে ওসি কৃপা সিন্ধু বালা আমাদের সঙ্গে অন্যায় করে আসছিলেন। সঠিক চার্জশিট দেয়ার জন্য তিনি প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার ঘুষ দাবি করেছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা ওসি কৃপা সিন্ধু নিজেই নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আসামি মুরাদের সঙ্গে আপোষ করে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করেন তিনি। আলামত হিসেবে জব্দ মোবাইল ফোন বেআইনিভাবে নিজের হেফাজতে নিয়ে ওই সময় বগুড়া সদর থানা, ছিলিমপুর ফাঁড়ি, আদমদিঘী থানায় পাঠিয়েছিলেন। সবশেষ তিনি প্রমাণস্বরুপ ভিডিওগুলো নষ্ট করেন।

বাদী আরো বলেন, ভিডিও নষ্টের বিষয়টি পিবিআই পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবিরের তদন্তে প্রমানিতও হয়েছে। সেই প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে। মামলার পরে মেডিকেল রিপোর্টেও ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আসামি জবানবন্দিও দিয়েছে। তাহলে তো মামলার তদন্তের আর কিছু নেই। এরপরেও চার্জশিট মিলছে না।

আরও পড়ুন: বগুড়ায় ওসির বিরুদ্ধে ধর্ষণের আলামত নষ্টের অভিযোগ

বাদী বলেন, মামলার সার্বিক অবস্থা জানার জন্য আমি ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টার দিকে বগুড়ার পিবিআইয়ের এসপি কাজী এহসানুল কবিরের কার্যালয়ে উপস্থিত হই। তিনি আমাকে জানান, পিবিআই বগুড়া ও পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার কর্তৃক ফরেনসিক রিপোর্টের ফলাফল একই এসেছে। সুতরাং পিবিআই বগুড়া কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনে কৃপা সিন্ধু বালাকে ফৌজদারী ও বিভাগীয় আইনের যে সমস্ত ধারায় অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছিল তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। কিন্তু পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার মহোদয় মামলার মূল চার্জশিটে কৃপা সিন্ধু বালাকে বাদ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। এসপি কাজী এহসানুল কবির আমাকে কৃপা সিন্ধু বালা ব্যতীত চার্জশিট নেওয়ার প্রস্তাব করলে আমি তা প্রত্যাখ্যান করে বাসায় চলে আসি। 

গত বছরের ৩ মার্চ স্কুল ছাত্রীকে নিজ ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মুরাদুজ্জমান। ওই সময় ধর্ষণের আপত্তিকর দৃশ্যও মুঠোফোনে ধারণ করেন ওই প্রভাষক। এমন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ১২ মে সকালে ধুনট থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা। মামলার পর ওইদিন সন্ধ্যায় প্রভাষক মুরাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গত বছরের ২ আগস্ট ধুনট থানার তৎকালীন ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে ধর্ষণের আলামত ধ্বংসের অভিযোগ করেন ওই স্কুলছাত্রীর মা। তিনি বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর কাছে লিখিতভাবে অভিযোগটি দেন। কিন্তু অভিযোগের পর দীর্ঘদিনেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় ধর্ষিতার মা ২৮ আগস্ট পিবিআই’র কাছে মামলা ও ওসির বিরুদ্ধে আলামত নষ্টের অভিযোগ তদন্তভার দেওয়ার দাবি জানান। তার দাবির প্রেক্ষিতে অক্টোবরে মামলার দায়িত্বভার নেন পিবিআই পরিদর্শক সেলিম মালিক। পরবর্তীতে ১ নভেম্বর থেকে মামলার তদন্ত করছেন এসআই সবুজ আলী। আর ওসি কৃপা সিন্ধুর অভিযোগটি দেখছেন পিবিআই এসপি কাজী এহসানুল কবির। 

ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সবুজ আলী বলেন, মামলার তদন্ত এখনও চলমান আছে। শুনেছি মামলার আসামি মুরাদুজ্জামান জামিন পেয়েছেন। তবে আমার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো নথি নেই।

পিবিআই বগুড়া কার্যালয়ের পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবির বলেন,  আমি কিন্তু এমন কোনো তথ্য দিইনি, যে কৃপা সিন্ধু বালা চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত হবেন না। তিনি ধারণার উপর এসব কথাবার্তা বলছেন। চার্জশিট এখনও দাখিল হয়নি। চার্জশিট দাখিল হলে তবে না বুঝতাম। মামলাটি এখনও তদন্তাধীন আছে। এ বিষয়ে এখন কোন মন্তব্য করা যাবে না। 

বগুড়ায় যে তদন্ত করলেন সেখানে নাকি প্রমাণিত হয়েছে এমনটি বাদীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি ওরকম না। তিনি আসলে ততটা বুঝেননি। কারণ রিপোর্ট তো এখনও দাখিলই হয়নি। এ বিষয়ে তো এখন মন্তব্য করা যাবে না। রিপোর্ট দাখিল হলে বুঝা যাবে প্রমাণিত না অপ্রমাণিত। রিপোর্ট পেলে আমি জানাবো আপনাদের।

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত ওসি কৃপা সিন্ধু বালা ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট পর্যন্ত বগুড়ার ধনুট থানার দায়িত্বে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের আলামত নষ্টের অভিযোগ ছাড়াও ধুনটের মাদক ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম হিটলু নামে এক যুবককে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ রয়েছে। নিহতের স্ত্রী শেফালী খাতুন ন্যায় বিচারের জন্য আবেদন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর ২৩ মে পুলিশের হেডকোয়ার্টার থেকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এসব ঘটনার পর রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ওসি কৃপা সিন্ধু বালাকে পাবনা জেলায় পাঠানো হয়। তিনি বর্তমানে পাবনা সদর থানার ওসি হিসেবে কর্মরত আছেন।

এনাম/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়