ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩১

ঋণের টাকায় কেনা ২ অটোরিকশা চুরি: চিরকুট লিখে চালকের আত্মহত্যা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৩, ১৫ অক্টোবর ২০২৩  
ঋণের টাকায় কেনা ২ অটোরিকশা চুরি: চিরকুট লিখে চালকের আত্মহত্যা

নিজের অটোরিকশার সঙ্গে মারা যাওয়া রঞ্জন

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বড় আজলদী গ্রামের অটোরিকশা চালক রঞ্জন (২৬)। অটোরিকশা চালিয়ে পরিবারের আহারের ব্যবস্থা করতেন তিনি। প্রথমে অন্যের অটোরিকশা ভাড়ায় চালালেও পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য প্রায় ছয় মাস আগে ঋণ করে একটি অটোরিকশা কেনেন তিনি। কিন্তু কিছুদিন আগে সেটি চুরি হয়ে যায়। এতে কিছুটা ভেঙে পড়েন রঞ্জন। তবুও সব ভুলে আবারও দেনা করে আরও একটি অটোরিকশা কেনেন তিনি। 

রোববার (১৫ অক্টোবর) সকালে পাকুন্দিয়া-কিশোরগঞ্জ সড়কের পাশ থেকে রঞ্জনেন কেনা দ্বিতীয় অটোরিকশাটিও চুরি হয়ে যায়। পরপর দুটি অটোরিকশা চুরি হওয়ায় কষ্ট সহ্য করতে না পেরে একটি চিরকুট লিখে নিজ ঘরেই আত্মহত্যার করেছেন রঞ্জন। এমন ঘটনায় তার বাড়িতে এখন শোকের ছায়া। চলছে অসুস্থ মা ও ছোট ভাইয়ের মাতম।

পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাহিদ হাসান সুমন জানান, রঞ্জন বড় আজলদী গ্রামের হাজী বাড়ির মৃত শাহাব উদ্দিনের ছেলে। তার আত্মহত্যার পেছনের ঘটনাটি খুবই নির্মম। সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত লাশ আমরা উদ্ধার করেছি। তার লাশের পাশ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে লিখা ছিল, ‌‌‌‌‌‘আমার অটো গাড়ি চুরি হয়ে গেছে তাই আমি আত্মহত্যা করেছি। তাই আমার মারে কেউ কষ্ট দিবেন না দয়া করে। মা তোমার দাবি আমি দিতে পারলাম না।’

আরো পড়ুন:

ওসি আরও জানান, রঞ্জনের পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- আজ দুপুরে অটোরিকশা চুরির পর রঞ্জন বাড়িতে ফিরে চুপচাপ ছিলেন। দুপুরের খাবার না খেয়ে অটোরিকশাটি যেখানে রাখা হতো সেখানে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। সন্ধ্যার দিকে অনেক ডাকাডাকি করেও তার কোনো সাড়া পায়নি পরিবার। পরে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে রঞ্জনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন তারা। 

তিনি আরও বলেন, আমরা রঞ্জনের দুটি অটোরিকশা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেব। থানায় একটি ইউডি মামলা করা হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ১০ বছর আগে রঞ্জনের বাবা শাহাব উদ্দিন মারা যান। এক ভাই সেও অনেক ছোট। তার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রঞ্জনের মাও অসুস্থ। তেমন কোনো সহায়-সম্পত্তি নেই তাদের। শুধু এক টুকরো বসতভিটিই ছিল সম্বল। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম রঞ্জনের কাধে ছিল অনেক দায়িত্ব। তাই ধার-দেনা করে একটি অটোরিকশা কিনেছিলেন তিনি। অটোরিকশাটি কেনার কিছুদিন পরই সেটি চুরি হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখোঁজি করেও অটোরিকশাটি না পেয়ে আবারও ঋণ করে আরেকটি অটোরিকশা কেনেন তিনি। আজ সকালে সেটিও চুরি হওয়ায় হয়ে যায়। দেনা পরিশোধের ভয়ে রঞ্জন হয়তো আত্মহত্যা করেছেন। 

রুমন/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়