ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বন্ধের পথে ‘বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা’

ফেনী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৩, ১৪ মে ২০২৪  
ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বন্ধের পথে ‘বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা’

সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে গত বছর এপ্রিল থেকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চালু করা হয় ‘বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা’।

প্রচার-প্রচারণার অভাবসহ নানা কারণে সরকারের এ বিশেষ সেবা শুরু থেকেই অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে না পৌঁছানো যায়নি। তবে এবার চিকিৎসকদের পরামর্শ ফি নিয়ে কর্তৃপক্ষের গড়িমসি, চিকিৎসক সংকট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে 'বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা'। গত ৩ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে সেবা কার্যক্রম।

অভিযোগ উঠেছে যে, গত ছয় মাস ধরে দেওয়া হচ্ছে না এ কার্যক্রমে সেবাদানকারী চিকিৎসকদের পরামর্শ ফি'র টাকা। যার কারণে অধিকাংশ চিকিৎসকের মাঝে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অনীহা দেখা দিয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। এতে সিনিয়র কনসালট্যান্টের পরামর্শ ফি ৪০০ টাকা, জুনিয়র কনসালট্যান্টের ৩০০ টাকা, এমবিবিএস-বিডিএসের ফি ২০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। নির্ধারিত ফি’র একটি অংশ পাওয়ার কথা চিকিৎসক ও সহযোগীদের। আরেকটি অংশ পাওয়ার কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু গত ছয় মাস চিকিৎসকদের ফি’র অংশ তাদের দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের শিশু রোগ চিকিৎসক বলেন, সকাল থেকে আউটডোর ও ওয়ার্ডে রোগী দেখতে হয়। সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় আউটডোরে সবসময় রোগীদের ভিড় থাকে। বিকেলে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে রোগী দেখলে যে টাকা পাওয়া যায় তার অনেক কম পাওয়া যায় বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায়। সে টাকাও পাচ্ছি না গত ছয় মাস ধরে। এটি যেহেতু চাকরির অংশ নয়, টাকা না পেলে কেন আমরা বাড়তি সেবা দেব।

নজরুল ইসলাম নামে এক রোগী বলেন, জেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় সকালে অনেক রোগীর চাপ থাকে। সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেক রোগীকে ডাক্তার দেখতে পারেন না। বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু থাকাকালীন এসব রোগীরা সেখানে চিকিৎসা নিতে পারতো। এমন কার্যক্রম বন্ধ হওয়া কোনভাবেই কাম্য নয়।

আবদুস সাত্তার নামে এক রোগী বলেন, গরীবের সব দিক থেকে কপাল পোড়া। বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু হওয়ায় আমাদের মতো গরীবদের উপকার হচ্ছিল। সেটাই সহ্য হচ্ছেনা সুবিধাবাদীদের। তাই নানা অজুহাতে সেবা কার্যক্রমটি বন্ধ করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো সার্জারি) জামাল উদ্দিন বলেন, প্রথম কয়েক মাস পরামর্শ ফি'র টাকা পেলেও বেশ কয়েক মাস টাকা দেওয়া হচ্ছে না। টাকা না পাওয়ায় চিকিৎসকরাও মনের বিরুদ্ধে চেম্বার করেন। এটা খুব স্বাভাবিক যে পারিশ্রমিক ছাড়া পরিশ্রম কেউই করতে চায় না।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. ব্রজ গোপাল পাল বলেন, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় মাসে একদিন চেম্বার করতে হয় আমাকে। সরকার নির্ধারিত ফি'র একটা অংশ সম্মানি হিসেবে চিকিৎসকরা পেয়ে থাকেন৷ গত ৩/৪ মাস চিকিৎসকরা কেউই ওই টাকা পাচ্ছেন না। টাকা কেন দেওয়া হচ্ছে না সেটি আমাদের অজানা। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক বা আরএমও ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আসিফ ইকবাল বলেন, এমনিতেই হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট এরমধ্যে সাম্প্রতিক ৬/৭ জন চিকিৎসক বদলি হয়েছেন। যার কারণে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। নতুন করে চিকিৎসক পদায়ন না হলে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ থাকবে।

বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ কেন এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজি বলেন, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ কথাটি পুরোপুরি ঠিক নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের কারণে এটি আপাতত বন্ধ বা ধীরগতিতে চলছে। যে অর্ডারের ভিত্তিতে এতদিন সেবা কার্যক্রম চলে আসছিল সেটি পরিবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে। এজন্য সেবা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

কেন চিকিৎসকদের পরামর্শ ফি দেওয়া হচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রথমে যে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল শুরুতে আমরা সে অনুযায়ী চিকিৎসকদের টাকা দিয়েছি। ওই আদেশের বিরুদ্ধে এখন আবার আমাদের নিষেধ করা হয়েছে তাই বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া কে কত টাকা পাবে সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের মাধ্যমে নতুন আরেকটি প্রজ্ঞাপন হবে সে অনুযায়ী টাকা দেওয়া হবে। এখন সব টাকাই সংরক্ষিত আছে। আদেশ পেলে সবাইকে টাকা দেওয়া হবে।

সাহাব/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়