ঢাকা     রোববার   ১৬ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ২ ১৪৩১

সেলাই মেশিন বঞ্চিত ১১ নারী!

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২০, ২৩ মে ২০২৪   আপডেট: ১২:৪৯, ২৩ মে ২০২৪
সেলাই মেশিন বঞ্চিত ১১ নারী!

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে সই দিয়ে ছবি তুলেও বরাদ্দের সেলাই মেশিন পেলেন না ১১ নারী। তাদের উপজেলায় ডেকে সেলাই মেশিনগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে অন্তত আড়াই মাস। সরকারি টাকার সেলাই মেশিনগুলো না পেয়ে হতাশ এই ১১ নারী।

ভুক্তভোগী নারীদের অভিযোগ, সরকারি প্রকল্পের টাকায় সেলাই মেশিন দেওয়ার কথা বলে তাদের ডাকা হয় উপজেলাতে। তাদের সামনে সেলাই মেশিনগুলো রেখে ছবি তুলেন উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী আছহাবুর রহমান। পরে ওই মেশিনগুলো তাদের না দিয়ে ফেরত নিয়ে নেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আওতায় উপজেলার দুস্থ ও অসহায় মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এই টাকায় ২৭টি সেলাই মেশিন নারীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। 

মোসা. মিম আক্তার নামে এক ভুক্তভোগী নারী বলেন, উপজেলা থেকে এলজিইডি অফিসের মোখলেশ নামে একজন ফোন দিয়ে আমাদের সেলাই মেশিন নিতে ডাকলো। সেখানে গিয়ে দেখি সেলাই মেশিন বিতরণ করছে। আমারও সেখানে গেলাম, এমনভাবে আমাদের ছবি তুললো, মনে হয় মেশিনটা দিয়ে দিবে। তখন আমরা খুশি হলাম। ছবি তোলার পর সেলাই মেশিনটা নিয়ে চলে গেলো আর তারা বললো- আজ আপনাদের মেশিন দিবো না। যখন মেশিন দিবো আপনাদের ফোন করে ডেকে নিবো। এরপর দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও এখনও সেলাই মেশিনের কোন খবর নাই।

মোসা. সুরমা নামে আরেক নারী বলেন, আইডি কার্ড নিয়ে সই নিলো, সেলাই মেশিনের সামনে ছবি তুললো। ছবি তুলে পাঠিয়ে দিয়েছে, সেলাই মেশিন দেয়নি। পরে দিবো বলে এখনও কোন খবর নাই। 

মোসা. সালেহা খাতুন নামে এক নারী বলেন, আমরা সেলাই মেশিনের কাজ করতে পারি। মেশিনটা পেলে আমাদের উপকার হতো। সেলাই মেশিন চালিয়ে গরীবের সংসারে উন্নতি হতো। আমাদের অনেক সুবিধা হতো।

উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের হিসেব সহকারী মকলেছুর রহমান বলেন, যাদেরকে মুঠোফোনে ডাকা হয়েছে তাদের সবাইকে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। একেকটি সেলাই মেশিনের বাজেট ছিল প্রায় ৮ হাজার টাকা।

ভুক্তভোগী নারীদের নামে বরাদ্দ সেলাই মেশিনগুলো ছবি তুলে ফেরত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে ভোলাহাট উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলী আছহাবুর। 

তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরের আগে সেলাই মেশিনগুলো বিতরণ করা হয়েছে। যারা সেলাই মেশিন পেয়েছে তাদের চিনিনা। যাদের তালিকা করা হয়েছে তারা সবাই সেলাই মেশিন পেয়েছে। 

অভিযোগের তীর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহনাজ খাতুনের দিকে তুলে এই উপজেলা প্রকৌশলী বলেন, এসব বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। যারা সেলাই মেশিন পেয়েছেন তাদের শিখিয়ে দিয়ে এসব কথা বলতে বাধ্য করছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহনাজ খাতুন বলেন, মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ প্রকল্পের জন্য ২৭ জনের নাম তালিকাভূক্ত করে এলজিইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তারা ১৬ জনের মাঝে মেশিনগুলো বিতরণ করে। কিন্তু বাকি ১১ জনকে কয়েক দফায় ডেকে সই নিয়ে সেলাই মেশিন সামনে রেখে ছবি তুলে তা ফেরত নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের ঠিকাদার আব্দুল গণি ও উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী জোগসাজশে ফেরত নেওয়া সেলাই মেশিন বিক্রি করে দিয়েছেন।

জানতে চাইলে ঠিকাদার আব্দুল গণি বলেন, আমার ব্যবসায়ীক এক সহযোগীর মাধ্যমে উপজেলা এলজিইডির কাছে সেলাই মেশিন দিয়েছিলাম। আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা। এসব কাজের সঙ্গে জড়িত কখনই ছিলাম না। 

সম্প্রতি এ ঘটনায় স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক ও চাঁপাইনবাগঞ্জ এলজিইডির  কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভোলাহাট উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসা. শাহনাজ খাতুন।

অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজ নিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোজাহার আলী প্রাং  বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত চলছে। উপযুক্ত প্রমাণ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিয়াম/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়