ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১০ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২৫ ১৪৩১

আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন যশোরের সন্ত্রাসী ‌‘ফিঙে’ লিটন

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৩, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ২৩:০২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন যশোরের সন্ত্রাসী ‌‘ফিঙে’ লিটন

আনিসুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙে লিটন। ছবি সংগৃহীত

পালতক থাকা যশোরের শীর্ষ সন্ত্রাসী আনিসুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙে লিটন দুই দশক পর দেশে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে তিনি যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জাজ ফারজানা ইয়াসমিনের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। বিচারক শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আনিসুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙে লিটন যশোর শহরের বারান্দি মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা বদর উদ্দিনের ছেলে।

যশোর কোর্ট ইন্সপেক্টর রোকসানা খাতুন জানান, ১৯৯৯ সালে অস্ত্র আইনের একটি মামলায় আনিসুর রহমান লিটনের ১০ বছর সাজা হয়। এরপর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। ওই মামলায় আজ তিনি আত্মসমার্পণ করে জামিন আবেদন করেন আদালতে। বিচারক আবেদনটি নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আরো পড়ুন:

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন জানান, বিচারকের আদেশ প্রাপ্তির পর আনিসুর রহমান ওরফে ফিঙে লিটনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের সিডিআর মতে তার বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। অন্যান্য যেসব মামলার কথা শোনা যায়, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যশোরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আলোচিত নাম ‘ফিঙে লিটন’। ১৯৯৯ সালে অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। ভারত, নেপাল, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও কাতার অবস্থান করেছেন তিনি। জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হলেও গ্রহণ করেছেন নেপালি পাসপোর্ট। তিনি দুই যুগ ধরে দেশের বাইরে থাকলেও তার নামে ত্রাসের রাজত্ব ছিল যশোরে। তার দাপট কাজে লাগিয়ে অনুসারীদের চাঁদাবাজি, দখল, চোরাচালানি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ছিল ওপেন সিক্রেট। তবে পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নামায় সরাসরি কোন অপরাধে তাকে সম্পৃক্ততার প্রমাণ করতে পারেনি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তার নামে একটি অস্ত্র মামলা ছাড়া আর কোন মামলা আছে কিনা সেই তথ্যও দিতে পারেনি পুলিশ।

দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকলেও আনিসুর রহমান লিটন আধিপত্য বজায় রেখেছেন তার এলাকা শহরের মোল্লাপাড়া, বারান্দিপাড়া ও মণিহার এলাকায়। নিজে এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও ২০০৯ সালের পর শেখ হাসিনার সরকারের আমলে পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় করেছিলেন।

২০২১ সালে যশোর পৌরসভা নির্বাচনে ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ফিঙে লিটনের ভাই সাইদুর রহমান রিপন ওরফে ডিম রিপন। তার বিজয়ের নেপথ্যে ফিঙে লিটনের প্রভাব ছিল বলেও জনশ্রুতি আছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন ফিঙে লিটনের স্ত্রী সদর উপজেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক ফাতেমা আনোয়ার। তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে সাবেক সংসদ সদস্য নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে, নির্বাচনের আগে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তাকে যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

ফিঙে লিটন দেশের বাইরে থাকলেও দেশে পরিবহন ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন স্ত্রী ফাতেমা আনোয়ারের নামে। লিটন ট্রাভেল নামে তাদের পরিবহন ব্যবসা রয়েছে।

রিটন/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়