ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিমের চাচা

‘পুরো এলাকা হারিয়েছে সাহসী এক তরুণকে’

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৮, ২৪ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৪:৫৫, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
‘পুরো এলাকা হারিয়েছে সাহসী এক তরুণকে’

চট্টগ্রাম বিভাগের প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরাম।

চট্টগ্রামের মুরাদপুর মোড়। বিকেল গড়াচ্ছে সন্ধ্যার দিকে। সেদিন ছিল ১৬ জুলাই। একবুক আশা আর বুকভরা সাহস নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে দাঁড়িয়ে ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের তরুণ ছাত্রনেতা ওয়াসিম আকরাম। একদল বিপ্লবী তরুণের সঙ্গে তিনিও যেন স্বপ্ন দেখছিলেন একটি বৈষম্যহীন সমাজের। কিন্তু ওই বিকেলেই পুলিশের গুলি এবং সাদা পোশাকধারীদের হামলায় নিভে যায় সেই স্বপ্ন। ২২ বছর বয়সী ওয়াসিম হয়ে গেলেন চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ। সেই সাথে পুরো এলাকা হারায় একজন সাহসী তরুণকে।

ওয়াসিমের চাচা মাওলানা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা ভাবতেও পারিনি, ওয়াসিম এভাবে চলে যাবে। সে ছিল পরিবারের ভবিষ্যৎ। তার মৃত্যুতে যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে আমাদের জীবনে। ওয়াসিমকে হারিয়ে আমরা শুধু স্বজন নয়, পুরো এলাকা হারালো একজন সাহসী তরুণকে।’

আরো পড়ুন:

একজন সাহসী সৈনিক ওয়াসিম: চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ওয়াসিম ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির একজন নিবেদিত সদস্য। চট্টগ্রামের প্রতিটি আন্দোলনে তার সক্রিয় উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। সহপাঠীরা জানান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি কখনো পিছু হটেননি। প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সহযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতেন। 

মৃত্যুর একদিন আগে ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে ওয়াসিম লিখেছিলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে আছে আমার প্রাণের সংগঠন। আমি এই পরিচয়েই শহীদ হবো।” এই কথাগুলো ছিল তার জীবনের শেষ বার্তা। পরদিন বিকেলেই পুলিশের বুলেটে থেমে যায় তার হৃৎস্পন্দন। 

সেদিনের ভয়াবহতা: প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৬ জুলাই দুপুর থেকেই নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হতে থাকে। বিকেল ৩টার দিকে মুরাদপুর মোড় এবং আশপাশের এলাকায় শুরু হয় সহিংস সংঘর্ষ। প্রথমে লাঠিপেটা, পরে গুলি চালায় পুলিশ। সাদা পোশাকের কয়েকজন অস্ত্রধারীকেও গুলি চালাতে দেখা যায়। 

ওয়াসিমের সহপাঠী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশের গুলির শব্দ আর ককটেলের বিস্ফোরণে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা জীবন বাঁচাতে ছুটতে থাকে। কিন্তু ওয়াসিম দাঁড়িয়ে ছিল সাহসের প্রতীক হয়ে। সেই সাহসই তাকে লক্ষ্য বানিয়ে দেয়। গুলিতে লুটিয়ে পড়ে ওয়াসিম।’ 

এদিকে ওয়াসিমের মৃত্যুর খবরে যখন তার কক্সবাজারের পেকুয়া গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়, তখন শোকস্তব্ধ হয়ে যায় পুরো পরিবার। বাবা শফিউল আলম মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে কর্মরত। পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ওয়াসিম ছিলেন পরিবারের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। মৃত্যুর পরদিন সকাল ১১টায় পারিবারিক কবরস্থানে জানাজার পর তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বিনয়ী এবং সবার সঙ্গে আন্তরিক মিশে যাওয়ার কারণে ওয়াসিম এলাকায় সবার প্রিয় ছিলেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, সরকার এই মেধাবী তরুণের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে এবং তার মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে।

ওয়াসিম আকরাম আজ আর নেই। কিন্তু তার রক্ত যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে যাবে। তার স্বপ্ন হয়তো থেমে গেছে, কিন্তু তার আত্মত্যাগ আন্দোলনের ইতিহাসে চিরজ্বলন্ত বাতিঘর হয়ে থাকবে। এমনটাই মনে করেন সচেতন মহল।

ঢাকা/ইমন/এনএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়