ঢাকা     মঙ্গলবার   ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ||  মাঘ ২৮ ১৪৩১

ধামরাইয়ে ওরশ বন্ধের পর ভেঙে দেওয়া হলো মাজার

সাভার প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৫, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৮:৫৫, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫
ধামরাইয়ে ওরশ বন্ধের পর ভেঙে দেওয়া হলো মাজার

ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের অর্জুন নালাই গ্রামে প্রয়াত শুকুর আলী শাহ ফকিরের (রহ:) মাজার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে

ঢাকার ধামরাইয়ে একদল মুসল্লি একটি মাজারে ৬৬তম ওরশ চলাকালে প্রথমে সেটির কার্যক্রম বন্ধ ও পরবর্তীতে সেটি ভেঙে দিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের অর্জুন নালাই গ্রামে প্রয়াত শুকুর আলী শাহ ফকিরের (রহ:) মাজারে এ ঘটনা ঘটে। 

ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতার কারণে শুকুর আলীর দুই ছেলে তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙচুরের ঘটনায় ধামরাই ওলামা পরিষদ ও ধামরাই ইমাম পরিষদের নেতাকর্মীসহ বেশ কয়েকটি মসজিদ ও মাদ্রাসার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, গতকাল মাজারটিতে ৬৬তম ওরশ আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ শেষে রাতে বাউল গান হওয়ার কথা ছিল। তবে বিকেলের দিকে ধামরাই ওলামা পরিষদ ও ইমাম পরিষদের নেতৃত্বে একদল মুসল্লি মাজারের কয়েক গজ দূরের পার্শ্ববর্তী অর্জুন নালাই জামে মসজিদে জড়ো হন। তারা ওরশ ও গানের আয়োজন বন্ধের দাবি জানান। 

রাত ৮টার দিকে পুলিশ এসে মুসল্লিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় ওরশ সংশ্লিষ্টদের ওরশের আয়োজন বন্ধের কথা জানালে তারা ওরশ বন্ধ করেন। তবে এরপর মুসল্লিরা ওরশের আয়োজকদের গ্রেপ্তার ও মুচলেকা নেওয়ার দাবি জানান। 

পুলিশ তাতে সায় দেয়নি। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এসময় মুসল্লিদের নেতৃত্ব দেওয়া ইমামরা এই মাজার চিরতরে বন্ধের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করবেন জানিয়ে মসজিদ ত্যাগ করেন। 

এরপরে রাত ১০টার দিকে সেখানে উপস্থিত অন্য ৫০-৬০ জন মুসল্লি দলবেঁধে মাজারটিতে ঢুকে মাজার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। সেখানে থাকা দুটি কবরসহ বসতবাড়ির একটি টিনের ঘর সম্পূর্ণ ভাঙচুর ও অপর একটি ঘরের বেড়ার টিন ভাঙচুর করে। 

এ ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মাজার সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাসিন্দারা প্রাণ ভয়ে বাড়িটি ত্যাগ করে।

প্রত্যক্ষদর্শী পারভেজ (ছদ্মনাম) বলেন, “গতকাল বিকেলের দিকে বহিরাগত শতাধিক মুসল্লি মসজিদে জড় হন। এরপর তারা মাজারে গান বাজনা বন্ধ করতে বলেন। স্থানীয় বেশ কিছু লোকও ছিলো সেখানে। তারা মসজিদের মাইকে ওই মাজারে সেজদা দেওয়া, মান্নত করা, পীরকে সেজদা করা চলবে না বলে স্লোগান দেয়। রাত ১০টার দিকে ৫০-৬০ জন মুসল্লি গিয়ে মাজার ভেঙে ফেলেন।”

প্রয়াত শুকুর আলীর স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, “মাজারে মোমবাতি আর আগরবাতি জ্বলাইতাম। বহুবছর ধইরা ওরশ হয়। গতকাল মুসল্লিরা নিষেধ করছিলো ওরশ করতে, আমরা বন্ধ করছিলাম। এরপর রাইতে ৫০-৬০ জন লোক আইসা মাজার, ঘর ভাইঙ্গা দিছে। ওরা আমারে মারতে চাইলে মারুক। ভয়ে পোলারা বউ পোলাপান নিয়া চইলা গেছে। পুলিশ আইছিলো কইছে মামলা করতে, আমরা মামলা করলে মামলা চালামু কেমনে?” 

ধামরাই উপজেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি সানাউল্লাহ বলেন, “আমাদের কাছে অভিযোগ আসে ওই বাড়িতে মাদক ব্যবসাসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ড হয়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হতে গতকাল ধামরাই উপজেলা ইমাম পরিষদ ও আমাদের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ ওই বাড়ির পাশেই একটি মসজিদে জড় হই। আমাদের মূল লক্ষ ছিল গান বাজনা বন্ধ করা। ভাঙচুর কোন সমাধান নয়। যখন পুলিশের কাছে তারা ওরস বন্ধ করা হয়েছে জানায় তখন আমরা এশার নামাজ শেষে চলে আসি। এরপর শুনেছি স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাদের ক্ষোভ থেকে মাজার ভেঙেছে। আমাদের লক্ষ্য ছিলো শান্তিপূর্ণ সমাধান, ভাঙচুর নয়।”

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।”

এদিকে এ ঘটনায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং কয়েকশ’ ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ধামরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, “এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে আক্কাস আলী নামে একজন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ ছাড়াও ঘটনার পরপর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে, ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।”

ঢাকা/সাব্বির/এস


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়