ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাবার রক্ত শুকায়নি, চোখের পানি মুছেই পরীক্ষার হলে আলফি

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৯, ১৭ এপ্রিল ২০২৫   আপডেট: ১৭:৫০, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
বাবার রক্ত শুকায়নি, চোখের পানি মুছেই পরীক্ষার হলে আলফি

পরিবারে শোকের মাতম। ইনসেটে নিহত আকরাম হোসেন।

বাবা তখনো মর্গে। ঘরে কফিন, উঠোনে শোক। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে কান্নায়। এমন এক সকালে আলফি আক্তার পৌঁছে গেল পরীক্ষার কেন্দ্রে, যেন নিজেকেই হার না মানার প্রমাণ দিতে।

আলফি রাজশাহীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ছাত্রী। চলছে এসএসসি পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) তার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র ছিল রাজশাহীর শিরোইল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। অথচ আগের রাতেই, ঠিক ১০টার দিকে, উত্ত্যক্তকারীদের হামলায় খুন হন তার বাবা আকরাম হোসেন (৪৫)।

আলফির বাবার একটাই ‘অপরাধ’—মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করেছিলেন। বখাটেদের সেই ‘অপরাধবোধহীন প্রতিশোধ’ যেন মুছে দিল এক সংসারের হাসি। 

তালাইমারি এলাকার বাসিন্দা আকরাম হোসেন পেশায় বাসচালক ছিলেন। বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে তার মেয়ে আলফিকে রাস্তায় হেনস্তা করে কিছু যুবক। প্রতিবাদ জানানোর পর রাতেই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই দল।

প্রথমে হামলা হয় আকরামের ছেলে ইমাম হাসান অনন্তর ওপর। বাবার প্রাণপণে এগিয়ে আসাও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। মাথায় ইটের আঘাতে রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়েন আকরাম। ছেলেই তাকে নিয়ে দৌড়ান হাসপাতালে—কিন্তু চিকিৎসক জানিয়ে দেন, তিনি আর নেই।

সবেমাত্র জীবন শুরু করা এক মেয়ের কাছে এ যেন সব হারানোর শুরু। মা মুক্তি বেগম বলেন, “সারারাত কেঁদেছে। বলেছে—‘বাবা নেই, আমি কিছুতেই যেতে পারব না।’ অনেক বোঝানোর পর ওকে পরীক্ষার হলে পাঠানো হয়।”

তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়েকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করছিল তালাইমারির বাবর আলী রোড এলাকার বখাটে নান্টু ও তার সহযোগীরা। বুধবার বিকেলে রাস্তায় চলার সময় আলফিকে গালাগালি করে ওই যুবকেরা। ঘটনা শুনে মেয়ের বাবা নান্টুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে নান্টু। রাত সাড়ে ৮টার দিকে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে তারা এসে প্রথমে আমার ছেলে ইমাম হাসান অনন্তকে মারধর করে। ছেলের চিৎকার শুনে ছুটে গেলে আমার স্বামীকেও ঘিরে ধরে হামলাকারীরা। একপর্যায়ে তার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। মারাত্মক আহত অবস্থায় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’’

অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, “আলফি খুবই মেধাবী। তার বাবাকে যে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দোষীদের দ্রুত বিচার চাই।”

এ ঘটনায় ইমাম হাসান অনন্ত বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছেন—নান্টু, বিশাল, খোকন মিয়া, তাসিন হোসেন, অমি, নাহিদ ও শিশির। এ ছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, “দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।’”

ঢাকা/কেয়া/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়