ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মাকে ‘নাকে খত’: বিএনপির সেই নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি

ফেনী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৮, ৫ মে ২০২৫   আপডেট: ১৫:২৬, ৫ মে ২০২৫
মাকে ‘নাকে খত’: বিএনপির সেই নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি

চুরির অভিযোগে ২ কিশোরের মাকে ‘নাকে খত’ দিতে বাধ্য করা হয়।

ফেনীতে দুই কিশোরের বিরুদ্ধে হাঁস ও কবুতর চুরির অভিযোগে তাদের মায়েদের নাকে খত দেওয়ানোর ঘটনায় সালিসে নেতৃত্ব দেওয়া সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেলুকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (৪ মে) রাতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নারী অবমাননার ঘটনায় তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এর আগে সন্ধ্যায় সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুর রহমান বকুল ও সদস্য সচিব আমান উদ্দিন কায়সার স্বাক্ষরিত আরেক বিজ্ঞপ্তিতে দেলুর সাংগঠনিক পদ স্থগিত করা হয়। 

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন বলেন, “মানবাধিকারের লঙ্ঘনকারী কোনো ঘটনার দায় দল নিতে পারে না। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে তার সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।”

এর আগে গত ১ মে রাতে ইউনিয়নের মধ্যম মাথিয়ারা এলাকায় চুরির অভিযোগে দুই কিশোরকে প্রকাশ্যে মারধর ও তাদের মায়েদের ‘নাকে খত’ দিয়ে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।

এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, দেলোয়ার হোসেন দেলু লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। এসময় দুই কিশোরের মা নাকে খত দিয়ে ক্ষমা চাইছেন। ভিডিওর অন্য অংশে দেখা যায়, কিশোরদের লাঠি দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দশ দিন আগে মাথিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি থেকে হাঁস ও কবুতর চুরি হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় দুই কিশোরকে সন্দেহ করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে সালিশ বৈঠক ডাকা হয়। সালিশে সভাপতিত্ব করেন দেলোয়ার হোসেন দেলু। সালিশে দুই কিশোরের সঙ্গে তাদের মায়েদেরও ডাকা হয়। পরে অভিযুক্ত কিশোরদের মারধর করা হয়। তাদের মায়েদের বলা হয়, সন্তানদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে না পারার দায়ে তাদের নাকে খত’ দিয়ে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে।

অভিযুক্ত এক কিশোরের মা বলেন, “আমার ছেলে যদি ভুল করে থাকে, তার বিচার হতে পারে। কিন্তু, আমাকে সবার সামনে এভাবে অপমান করা হবে, তা কল্পনাও করিনি।”

আরেক কিশোরের মা বলেন, “আমি কোনো অন্যায় করিনি। শুধু একজন মা হওয়ার কারণে আমাকে এত বড় অপমান সহ্য করতে হলো।”

তবে দেলোয়ার হোসেন দেলু বলেন, “আমি কাউকে মারিনি। অভিযুক্ত কিশোরদের মায়েরা আমার কাছে আবদার করেছিলেন—বিষয়টি যেন সামাজিকভাবে মীমাংসা করা হয়। তারাই স্বেচ্ছায় নাকে খত দিয়েছেন।”

এ বিষয়ে ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা নাসরীন কান্তা বলেন, “নারীকে এভাবে হেনস্তা করার অধিকার কারো নেই। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, “ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/ইভা  

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়