আ.লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ: জেলায় জেলায় আনন্দ, মিষ্টি বিতরণ 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার তা ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সারা দেশে আনন্দ-উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা গেছে। 

ফরিদপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া, বগুড়া ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিরা আনন্দ-উল্লাসের তথ্য পাঠাচ্ছেন।

ফরিদপুর: আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার ঘোষণা শোনার পর ফরিদপুরে আনন্দ মিছিল হয়েছে।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফরিদপুর শহরের জনতা ব্যাংক মোড় থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে এই মিছিলে স্থানীয় জনগণ, ছাত্র-যুবক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দেন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

মিছিল শেষে ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফরিদপুর জেলার প্রধান সংগঠক আনিসুর রহমান সজল বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক। এটি জনগণের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিফলন। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এই সাহসী পদক্ষেপের জন্য।

“জুলাই ঘোষণাপত্র ৩০ দিনের মধ্যে প্রকাশের সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করি, বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হবে,” যোগ করেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জিহাদুল ইসলাম রত্ন। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করবে। আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই এবং আশা করি, এটি দেশে ন্যায়বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।”

মিছিলে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় ছিলাম। এই সিদ্ধান্ত আমাদের আশা জাগিয়েছে।”

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেছেন, এটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। 

খুলনা: বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় উল্লাস করছেন খুলনার ছাত্র-জনতা। শনিবার (১০ মে) রাতে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে এ বিষয়ে ঘোষণার পর মহানগরের শিববাড়ি মোড়ে বিজয় মিছিল এবং সমাবেশ করেন তারা। 

মিছিলে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় নাগরিক পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী শাসনতন্ত্র যুব আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। মিছিলটি সার্বিকভাবে সমন্বয় করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) খুলনার সংগঠক আহাম্মদ হামিম রাহাত।

কুষ্টিয়া: আওয়ামী লীগের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় কুষ্টিয়ায় আনন্দ-উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ করেছে ৎছাত্র-জনতা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের মজমপুর গেটে দলটিকে ‘গণহত্যাকারী’ অ্যাখ্যা দিয়ে মিছিল করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। সমাবেশে বক্তব্য দেন- কুষ্টিয়া জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান, জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক রিন্টু। 

কুমিল্লা: কুমিল্লা শহরে রাত ১১টার পর থেকেই ছাত্র-জনতা আনন্দে মেতে ওঠেন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় চলে মিছিল, স্লোগান ও ঢাক-ঢোলের উৎসব।

কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ, কান্দিরপাড়, রাণীর দিঘীর পাড়, ঝাউতলা ও শাসনগাছা এলাকায় মিছিল বের হয়। ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও মিছিলে অংশ নেন। ‘স্বাধীন বিচার চাই’, ‘দুর্নীতিবাজের বিচার চাই’, ‘গণতন্ত্রের বিজয় হোক’-এমন নানা স্লোগান মুখরিত হচ্ছে পুরো এলাকা।

বগুড়া: আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের খবরে বগুড়ায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। রাত সাড়ে ১১টায় ছাত্র-জনতার ব্যানারে শহরের সাতমাথা থেকে মিছিল বের হয়। সেটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদিক্ষণ করে। 

মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ‘শেষ মুহূর্তে খবর এলো, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো’, ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’সহ নানা স্লোগান দিয়ে উল্লাস করতে দেখা গেছে। 

সাভার (ঢাকা): উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক শেষে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় সভারে আনন্দ মিছিল হয়েছে। সাভারের শহীদ ইয়ামিন চত্বর থেকে এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা মিছিলটি বের করেন।

মিছিলকারীরা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ দেন। পাশাপাশি জুলাই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে যে গণহত্যা চালিয়েছিল সেই রক্তে এখন তারা ডুবে গেছে। শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা হওয়ার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে আনন্দ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সভায় এমন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। 

এর আগে, জেলা শহরের বড়ইন্দারা মোড় থেকে আনন্দ মিছিল বের করে জামায়াত। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শান্তিমোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এতে জামায়াত ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

আনন্দ মিছিলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির আবুজার গিফারী, জাময়াত নেতা আবু বকর, তোহরুল ইসলাম সোহেল, শফিক এনায়েতুল্লাহ, শিবির নেতা আবু তালেবসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।