ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

অতিরিক্ত বিল পেয়ে ঠিকাদার লাপাত্তা, পাঠদান ঝুঁকিতে

মাহমুদুল হাসান মিলন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪০, ১১ মে ২০২৫   আপডেট: ১৫:৪৪, ১১ মে ২০২৫
অতিরিক্ত বিল পেয়ে ঠিকাদার লাপাত্তা, পাঠদান ঝুঁকিতে

নির্মাধীন ময়মনসিংহ নগরীর আকুয়া মড়লপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন

পাঁচ অর্থবছরেও শেষ হয়নি ময়মনসিংহ নগরীর আকুয়া মড়লপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ। ভবনটির ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করে ফেলে রাখা হয়েছে। অথচ বরাদ্দের প্রায় ৯০শতাংশ টাকা তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ময়মনসিংহ সদর উপজেলা।

এদিকে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায়, বিদ্যালয়টির জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। যে কোনো সময় ধসে দুর্ঘটনার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। তবে অসম্পন্ন ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্নের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রশাসন।

প্রায় ৩৫ বছর আগে তৎকালীন অজপাড়া গ্রাম আকুয়া মড়লপাড়ায় শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্য কয়েকজন মিলে উদ্যোগ নেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করার। মানুষের দানের ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় কেনা হয় ৩৩ শতাংশ জমি। গ্রামের নামে নামকরণ করা হয় আকুয়া মোড়লপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেটি ২০০২ সালে সরকারি করণ করা হয়।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিদ্যালয়টিতে দু’তলা ভবননির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। টেন্ডারের মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা চুক্তিতে কাজ পান আয়ান এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভবননির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের দিকে। ছাদসহ দোতলার ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলেও তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজের যোগসাজশে চুক্তি মূল্যের প্রায় ৯০ শতাংশ টাকা উত্তোলন করে ২০২০ সালে লাপাত্তা হয়ে যায় ঠিকাদার গোলাম মোস্তুফা। এরপর আর কাজ শুরু হয়নি।

ভবনটির কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সেটি স্থানীয় মাদকসেবীদের নিরাপদ জোন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে চলে মাদকসেবন। যা নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। এছাড়াও কাজের অতিরিক্ত বিল প্রদান করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও করেন স্থানীয়রা।

এদিকে পুরাতন একতলা ভবনে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখাযায়, বিদ্যালয়টির মোট শিক্ষার্থী ৩১৪জন। জরাজীর্ণ একতলা ভবনের তিনটি রুমে দুই শিফটে তাদের পাঠদান চলে। প্রায়ই পলেস্তারা ধসে মাথার ওপর পড়ে। আহত হন শিক্ষক-শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাসে দেখায় প্রত্যেক বেঞ্চে ৪-৫ জন করে শিক্ষার্থী বসছে। এতে তাদের লেখা-পড়া ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত অসম্পন্ন ভবনটির নির্মাণকাজ সম্পন্নের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, এক বেঞ্চে পাঁচজনে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হয় তাদের। বৃষ্টির দিন আরও ভোগান্তি বাড়ে, একটু বৃষ্টি হলেই ছাদ থেকে পানি শরীরে পড়ে। দ্রুত নতুন ভবনটির কাজ সম্পন্নের দাবি জানিয়েছেন তারা।

আকুয়া মড়লপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল কবীর বলেন, “ভবনটির কাজ অসম্পন্ন রেখে হঠাৎ করে ঠিকাদার উধাও হয়ে যান। এরপর থেকে তাঁর সাথে যোগাযোগ করলেও কোন গুরুত্ব দেননি। নতুন ভবনের কাজটি সম্পন্ন না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের এই জরাজীর্ণ ভবনেই পাঠদান করানো হচ্ছে। প্রায় সময় ছাদের পলেস্তারা ভেঙে শরীরে পড়ছে। বৃষ্টি এলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। বারবার উপজেলা প্রকৌশলীকে বলা হলেও তিনি কোন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় সেখানে প্রতিনিয়ত মাদকসেবন চলছে। যে কোন সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনাও ঘটতে পারে।”

এ বিষয়ে ঠিকাদার গোলাম মোস্তুফার সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমি এখানে যোগদানের পর এই কাজে কোন বিল প্রদান করা হয়নি। এই কাজের চুক্তিমূল্য প্রায় ৮০ লাখ টাকা। মোট বিল প্রদান করা হয়েছে প্রায় ৭০ লাখ টাকা।”

আব্দুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, “নির্মাণকাজ অসম্পন্ন রেখে ঠিকারদার দেওলিয়া হওয়া পাশাপাশি পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে নতুন করে ২০ লাখ টাকা মূল্যের প্রাক্কলন করে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।”

কাজের অতিরিক্ত বিল প্রদানের বিষয়ে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, “এই বিষয়টি টেকনিক্যাল। এটা উপজেলা প্রকৌশলী বলতে পারবেন। তবে কাজ ফেলে রাখা ও জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জরিমানা আদায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”

ঢাকা/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়