ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া ব্যক্তি বেঁচে আছেন, যে কারণে এমন ঘটনা

বগুড়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৭, ১৯ মে ২০২৫   আপডেট: ২০:০৮, ১৯ মে ২০২৫
চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া ব্যক্তি বেঁচে আছেন, যে কারণে এমন ঘটনা

গতকাল রবিবার মতিউর রহমানের ট্রেনে ঝুলে থাকার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়

ফেসবুকের টাইমলাইন জুড়ে গতকাল রবিবার (১৮ মে) থেকে একটি ভিডিও ভেসে বেড়াচ্ছে। সেখানে দেখা গেছে, একজন ব্যক্তি চলন্ত ট্রেনে ঝুলে যাচ্ছেন; ভেতর থেকে কেউ তার হাত ধরে রয়েছেন। ঝুলে থাকা ব্যক্তি ট্রেনের ভেতরে উঠার এবং হাত ছেড়ে দিয়ে বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। আর্তনাদ করছেন, কিন্তু কিছুতেই ট্রেনে থাকা ব্যক্তিটি তাকে ছাড়ছিলেন না। অবশেষে নশরতপুর রেলওয়ে প্লাটফর্মে পৌঁছার পর ঝুলে থাকা ব্যক্তিটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন ওই ব্যক্তিটিকে বাঁচাতে এগিয়ে যান। 

৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে এমনটিই দেখা গেছে। অনেকে ধারণা করেছিলেন, ট্রেনে কাটা পড়ে লোকটি হয়তো মারা গেছেন। তবে, জানা গেছে, তিনি মারা যাননি।

আরো পড়ুন:

এই ঘটনাটি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ঘটেছে রবিবার দুপুর ১টায়। ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান (৫২)। তিনি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পাড়ইল গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি বিদেশে লোক পাঠানোর কাজের সঙ্গে যুক্ত। বগুড়ার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছে।

যে কারণে এ ঘটনা: 

ভুক্তভোগী মতিউর রহমানের ছেলে আহসান হাবিব জানান, তার বাবার মাধ্যমে দুই বছর আগে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার তালসন গ্রামের যুবক সজীব সৌদি আরবে যান। সেখানে যাওয়ার পর কাগজপত্রে সমস্যা থাকায় আকামা (কাজের সুপারিশ সনদ) পাননি। এ নিয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে সজীবের পরিবারের  বিরোধ চলছিল।

ওই বিরোধকে কেন্দ্র করেই তার বাবাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন  আহসান হাবীব।

তিনি জানান, গতকাল তার বাবা বগুড়া থেকে ট্রেনে করে রানীনগরের বাসায় ফিরছিলেন। বাবা জানিয়েছেন, ট্রেনের বগিতে যখন যাত্রী কম ছিল, তখন সাতজন যুবক তার কাছে যান। কেন সজিবের ইকামা হয়নি এসব বিষয়ে বাবাকে তারা জিজ্ঞেস করেন। বাবা ওই যুবকদের পরিচয় জানতে চান। তাদের একজন নিজেকে সজীবের শ্যালক সুমন বলে পরিচয় দেন।

এক পর্যায়ে তারা বাবাকে মোবাইল চোর আখ্যা দিয়ে মারধর করেন। তার পকেট থেকে ৫০ হাজার টাকাও বের করে নেন। তারা চাকুও বের করেছিল বাবাকে মারার জন্য। 

তিনি আরো জানান, এক পর্যায়ে বাবা নিজেকে বাঁচাতে ট্রেন থেকে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ট্রেনের ভেতর থেকে ওই সাতজনের মধ্যে কেউ একজন বাবার হাত ধরে রাখেন। নশরতপুর রেলস্টেশনের কাছে পৌঁছলে হাত ছেড়ে দিলে বাবা ট্রেনের নিচে চলে যান। বাবা অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন।

ঘটনার পর বাবাকে আদমদদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে বগুড়ার একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে বাবাকে আজকে সোমবার বাসায় নেওয়া হয়েছে। 

তিনি জানান, তার বাবার শরীরের বিভিন্ন জায়গার চামড়া উঠে গেছে। বুক ও কোমরে আঘাত পেয়েছেন। কোনো অঙ্গ কাটা যায়নি।  

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৫টা ৫০ মিনিট) ভুক্তভোগীর ছেলে আহসান হাবিব সান্তাহার রেলওয়ে জংশনের জিআরপি পুলিশ স্টেশনে ছিলেন মামলা করতে।

সান্তাহার রেলওয়ে জংশনের জিআরপি পুলিশ স্টেশনের ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, “ভুক্তভোগীর ছেলে আমাদের কাছে অভিযোগ দিতে এসেছেন। তাদের কাছে মৌখিক বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করব। এরপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/এনাম/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়