চুয়াডাঙ্গায় ২০০ কোটি টাকার আম বাণিজ্যের আশা
এম এ মামুন, চুয়াডাঙ্গা || রাইজিংবিডি.কম

চুয়াডাঙ্গায় ব্যাপক ফলন হয়েছে আমের
জ্যৈষ্ঠকে বলা হয় মধুমাস। নানা রকম সুস্বাদু ফল ফলে এ মাসে। তাই, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু প্রভৃতি। কবি জসীম উদ্দীনও তার ‘মামার বাড়ি’ কবিতায় লিখেছেন, ‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ, পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ।’
মধুমাসে আমের ব্যাপক ফলন হয় দেশের অন্যতম সুস্বাদু আম উৎপাদনকারী জেলা চুয়াডাঙ্গায়। এ জেলার আমের কদর রয়েছে দেশ ও দেশের বাইরে।
স্থানীয় চাষি ও কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় চলতি মৌসুমে ২০০ কোটির বেশি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা আছে।
আম পাড়ার পঞ্জিকা অনুযায়ী, পহেলা জ্যৈষ্ঠ (১৫ মে) থেকে আঁটি, গুটি ও বোম্বাই আম পাহরণের সময় শুরু হয়েছে। সে মোতাবেক আনুষ্ঠানিকভাবে এ মৌসুমের আম পাড়া উৎসব উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসক জহুরল ইসলাম। এর পরপরই চুয়াডাঙ্গার আমচাষি, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা দড়ি ও লগি নিয়ে বাগানে-বাগানে মেতে উঠেছেন আম পাড়ার উৎসবে।
আমচাষিরা জানিয়েছেন, তীব্র গরমের কারণে এবার আমবাগানে অতিরিক্ত সেচ দিতে হয়েছে। তাতে খরচ বেশি হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যদি আমের ক্ষতি না হয়, তাহলে সবাই লাভবান হবেন।
এ বছর ২২ মে থেকে হিমসাগর, ২৮ মে থেকে ল্যাংড়া, ৫ জুন থেকে আম্রপালি (বারি আম-৩), ১৫ জুন থেকে ফজলি ও ২৮ জুন থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ সংগ্রহ ও বাজারজাত শুরু হবে।
কিছু কিছু আমচাষি বলছেন, আঁটির আম পাড়ার সময় ২০ বৈশাখ শুরু হলে সবচেয়ে ভালো হয়।
কেউ যেন অপরিপক্ব আম বাজারজাত করতে না পারেন এবং চাষি ও ব্যবসয়ীরা যেন সুষ্ঠুভাবে আম বাজারজাত করতে পারেন, সেজন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম। তিনি চুয়াডাঙ্গার সুস্বাদু আম সংগ্রহের জন্য ভোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গায় এ বছর ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এ জেলায় প্রায় ১২ হাজার কৃষক আম চাষের সঙ্গে জড়িত। আশা করা হচ্ছে, হেক্টর প্রতি ১৫ মেট্রিক টন হিসেবে এ বছর ৩৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। গড়ে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দর হিসেবে এ বছর ২০৭ কোটি টাকার আম বেচা-কেনা হতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা মার্কেটিং অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেছেন, গত বছরের মতো চলতি বছরেও চুয়াডাঙ্গার সুস্বাদু আম বিভিন্ন জেলায় মার্কেটিং করার জন্য জেলা টু জেলা কানেকটিভিটি বাড়ানো হয়েছে, যাতে কৃষকরা তাদের আম বাজারজাত করতে পারেন।
চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোর বাগানে-বাগানে চলছে আম সংগ্রহ ও বাজারজাত করার প্রস্তুতি। কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবছর আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা অন্যান্য বছরের তুলন বেশি লাভবান হবেন।
ঢাকা/রফিক