জুলাই শহীদ আরমানের ছেলে-মেয়ের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান
নরসিংদী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
জুলাই আন্দোলনে শহীদ আরমান মোল্লার স্ত্রী-সন্তানের হাতে শুক্রবার দুপুরে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম- মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আরমান মোল্লার সন্তানদের দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার নির্দেশে শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে শহীদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী । তিনি শহীদের স্ত্রীর হাতে নগদ অর্থ সহায়তা তুলে দিয়েছেন।
শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার মেহেরপাড়ায় জুলাই আন্দোলনে শহীদ আরমান মোল্লার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রিজভী।
রিজভী বলেন, “শহীদ আরমান মোল্লার পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ গ্রহণ করেছে। যারা গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের পরিবার যেন কোনো কষ্টে না থাকে সেটিই আমাদের লক্ষ্য।”
তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “শহীদ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো বর্তমান সরকারের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তারা সে দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে।”
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, “কেন এই অবহেলা? কেন শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সরকারের কাছে নেই? এসব প্রশ্নের উত্তর জনগণ একদিন অবশ্যই চাইবে।”
এ সময় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য সচিব মোখলেছুর রহমান মিথুন, স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ২১ জুলাই নরসিংদী শিলমান্দী ইউনিয়নের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আরমান মোল্লা। তিনি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কলাগাছিয়া নয়াপাড়ার এলাকার বাসিন্দা। তার মৃত্যুতে স্ত্রী সালমা বেগম তিনটি নাবালক অবুঝ সন্তান নিয়ে খুবই অসহায় হয়ে পড়েন।
গত ২১ মে পাঠকপ্রিয় রাইজিংবিডি ডটকমে ‘জুলাই আন্দোলনে শহীদের সন্তানদের ঠাঁই হলো এতিমখানায়!’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সেসময় শহীদের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, “আমার জামাই ঝালমুড়ি বেচত। আমার ঘরে টাকা-পয়সা কম ছিল ঠিক। কিন্তু সুখের কমতি ছিল না। একটা গুলি আমাগো জীবন তছনছ কইরা দিল। আমার এখন আর চলার মতোন অবস্থা নাই। এল্লিগা, কোনো উপায় না দেইখা বড় মাইয়া আর একমাত্র পোলাডারে এতিমখানায় দিয়া সাইরা আমি এহন বুকে পাথর বাইন্ধা মরার মতোন ঘরে পইরা রইছি।’’
ঘটনার দিনের সকালের মধুর স্মৃতি স্মরণ করে সালমা বলেন, “সকালে আমি উইঠা রুটি বানাইয়া সাইরা ভাজি রানছিলাম। ওয় (আরমান মোল্লা) রুটি খাইয়া কয়, আজকার ভাজিডা খুব মজা অইছে। এমনেই বানাইয়ো। এরপর আমারে কয়, তুমি রান্নাডা সাইরালাও। আমি কাপড় ধুইয়া দিতাছি।”
তিনি বলেন, “আমার কোমরে ব্যাথা হওয়ার পর থিকা হেয় আমারে কোনো উডাইন্না কাম (ভারী কিছু ওঠানোর কাজ) করতে দিত না। আমার আর পোলাপানের সব কাপর-চোপর হেয়ই ধুইয়া দিত। বাচ্চাগো আর আমার অনেক আদর-যত্ন করত। হের মতোন ভালা মানুষ দুনিয়ায় কমই আছিল।”
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “আন্দোলনে যাইব দেইখা আমারে কইল, আজকা ভাল্লাগতাছে না। আজকা মুড়ি বেচত যাইত না। এরমইধ্যে হের এক বন্ধু ডাক দিলে হেয় বাইরে যাওয়ার কথা কয়। শরীর ভালা না দেইখা আমি যাইতে বারবার কইরা না না করছি। কিন্তু হেয় আমার কোনো কথা শুনে নাই। তবে মুখে খালি কইছিল, একটু ঘুরে আসি।”
তিনি বলেন, “আমি পরে হের বন্ধুরথে শুনছি, হেয় আন্দোলনে যাওনের লাগিই বাইর অইছিল।”
সালমা বেগম ভয়াবহ সেই দুপুরের কথা স্মরণ করে বলেন, “দুপুরের খাওনের সময় গেলেও ওয় বাইত ঢুকে না। পরে আমি ফোন দিছি, ফোন ধরছে হের বন্ধু। ওই ভাইয়ে কয়, ভাবি নাহিদের (আরমান মোল্লার ডাকনাম) গুলি লাগছে। আপনে হাসপাতলে আসেন।”
সালমা বলেন, “কথা শুইনা ছোড মাইয়ারে লইয়া নারসিংদী সদর হাসপাতালে গিয়া দেখি, হের মুখের উপ্রে কাপড় দিয়া ঢাইকা রাখছে! আমার জামাই হাসপাতালে আনার আগেই দম ফালায় দিছে।”
ঢাকা/হৃদয়/মাসুদ