ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শরীয়তপুরে সরকারি স্কুলে শিক্ষক সংকট, ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান

শরীয়তপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ২৫ মে ২০২৫   আপডেট: ১২:৪৯, ২৫ মে ২০২৫
শরীয়তপুরে সরকারি স্কুলে শিক্ষক সংকট, ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান

পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

শরীয়তপুর জেলার দুটি প্রধান সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট চরমে পৌঁছেছে। ১০৬টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৬১ জন শিক্ষক। ফলে একজন শিক্ষককে নিজের বিষয়ের পাশাপাশি একাধিক বিষয়ে ক্লাস নিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। 

এতে শিক্ষার মান যেমন নিচে নেমে যাচ্ছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহও কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, জেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মর্নিং ও ডে শিফট মিলিয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১১০০-এর বেশি। অথচ সেখানে ৫৩টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩৩ জন শিক্ষক। 

একই অবস্থা শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েও। এই বিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা ১,০০০-এর বেশি হলেও, শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ২৮ জন। এখানে ৫৩টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ২৫টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ফলে নিয়মিত ক্লাস নিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা। 

একাধিক বিষয়ে ক্লাস নিতে বাধ্য হওয়ায় শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট বিষয়ে সঠিকভাবে জ্ঞান অর্জন করতে পারছে না। এতে শিক্ষার মান যেমন নিচে নেমে যাচ্ছে, তেমনি পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী। 

পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তামিম মাদবর বলেন, “আমাদের জীববিজ্ঞানের ক্লাস নিচ্ছেন একজন ইংরেজি শিক্ষক। উনি চেষ্টা করেন কিন্তু আমরা সব বুঝতে পারি না। পরীক্ষায় ভালো করা কঠিন হয়ে পড়ছে।”

শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী খাদিজা আফরোজ বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক সময় এক বিষয়ের ক্লাস অন্য বিষয়ের শিক্ষক নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। আমরা নিয়মিত ও উপযুক্ত বিষয়ে দক্ষ শিক্ষক পেতে চাই। যেন আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার পথে কোনো বাধা না আসে। কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।”

শরীয়তপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ে দুই শিফটে পাঠদান চললেও পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় তাদের লেখাপড়ার মানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি আমাদেরও অতিরিক্ত ক্লাস নিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাই দ্রুত নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এই সংকট সমাধান করা জরুরি।”

পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফিরোজ মাতুব্বর বলেন, “শিক্ষক সংকট আমাদের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক বিষয়ের শিক্ষককে অন্য বিষয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে, এতে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে কিছুই শিখতে পারছে না।”

অতিরিক্ত জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “অধিদপ্তর থেকে যখনই শিক্ষক সংকটের তালিকা চাওয়া হয়, আমরা তা পাঠাই। কিন্তু বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট কাটবে না। এটিই সমাধানের একমাত্র কার্যকর পথ।”

ঢাকা/আকাশ/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়