ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কুষ্টিয়ায় জামায়াতের প্রার্থী হলেন ইসলামী বক্তা আমীর হামজা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ২৫ মে ২০২৫   আপডেট: ২২:২৭, ২৫ মে ২০২৫
কুষ্টিয়ায় জামায়াতের প্রার্থী হলেন ইসলামী বক্তা আমীর হামজা

কুষ্টিয়া-৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হলেন জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মুফতি আমীর হামজা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মুফতি আমীর হামজা। 

রবিবার (২৫ মে) দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের আব্দুল ওয়াহিদ অডিটরিয়ামে কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের দায়িত্বশীল সমাবেশে তার নাম ঘোষণা করেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসেন।

আরো পড়ুন:

আরো পড়ুন: ক্ষমা চেয়ে আমির হামজা বললেন ‘আমি সুস্থ না’

মোবারক হোসেন বলেন, “কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের প্রার্থী ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের প্রায় অধিকাংশ আসনের প্রার্থী ঘোষণা সম্পন্ন হলো।” 

মুফতি আমীর হামজাকে নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এ আসনে যে প্রার্থী (আমীর হামজা) দিয়েছি, তিনি শুধু দেশের মধ্যেই নন, আন্তর্জাতিকভাবে একজন পরিচিত ব্যক্তি।”

অনুষ্ঠানে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবুল হাশেম সভাপতিত্ব করেন।বিশেষ অতিথি ছিলেন- যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের টিম সদস্য আলমগীর বিশ্বাস ও অধ্যাপক খন্দকার এ কে এম আলী মহসীন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল গফুর, কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হুসাইন, কুষ্টিয়া শহর আমির এনামুল হক, ছাত্রশিবিরের শহর সভাপতি সেলিম রেজা, জেলা সভাপতি খাজা আহমেদ।

গত বছর এক ওয়াজ মাহফিলে ভারতীয় এক অভিনেত্রীর (রাশমিকা মান্দানা) সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন আমীর হামজা। তার ওই বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হলে সমালোচনা শুরু হয়। পরে গতবছরের ১০ ডিসেম্বর দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে দেশবাসী ও শ্রোতাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান তিনি।

নিচে আমীর হামজার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

“আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় তৌহীদি জনতা। আপনাদেরকে বারবার আশাহত করার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনাদের কিছু কথা বলা জরুরি মনে করছি। যাতে আপনারা আমার বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে ইনসাফ করতে পারেন। ঢালাওভাবে যেসব কথাবার্তা চারদিকে বলা হচ্ছে, তার সবটুকুই কি সঠিক? নাকি ভিন্ন বাস্তবতা আছে?

সম্প্রতি সিরিয়ার কারাগার থেকে মুক্ত বন্দিদের চিত্র আপনাদের সামনে। তারা অনেকেই নিজের নাম পর্যন্ত ভুলে গেছে। ফ্যাসিস্টের কারাগারে থাকাকালীন এমন কোনও নির্যাতন নাই যা আমার ওপরে করা হয়নি। আমার ব্রেনে পর্যন্ত কারেন্ট শক দেওয়া হয়েছে ও স্লো পয়েজনিং করা হয়েছে। বাকি নির্যাতনের কথা আর না বলি। আমি স্বীকার করছি মানসিকভাবে আমি পুরোপুরি সুস্থ না। শারীরিক ও মানসিক কোনোদিক দিয়েই আমি ফিট না।

নিজের অজান্তেই অসংলগ্ন কথাবার্তা মুখে চলে আসছে। আমার আচরণও আমার নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। এসব চিন্তা আমাকে আরও অসুস্থ করে তুলেছে। আর আমার দেওয়া বক্তব্য নিয়ে চলমান যে বিতর্ক- সেই আলোচনাটাতে শুধুমাত্র উক্ত নায়িকার আলাপটুকুই আমার ভুল হয়েছে, আমি স্বীকার করছি। তবে যদি আলোচনাটি পুরোপুরি শোনেন, তাহলে দেখবেন আলোচনাটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভবিষ্যতে আমি আরও সতর্ক থাকার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

এখন আপনারা বলতে পারেন আমি যেহেতু মানসিক ও শারীরিকভাবে ফিট না তাহলে এতো মাহফিল কেন করছি? সেক্ষেত্রে আপনাকে বলবো, আপনি কিছুক্ষণ আমার জায়গায় দাঁড়ান ভাই প্লিজ! তারপর ভাবুন। খোলামেলা আপনাদের বলছি, জামায়াতের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা, শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ যখন একটা মাহফিলের জন্য রিকোয়েস্ট করে তখন আমার কী করার থাকতে পারে বলুন?

শুধুমাত্র ভিআইপিদের রিকোয়েস্ট রাখতে গেলেই, সাধারণ জনতা তো বহুদূর। জেলার দায়িত্বশীল ও আত্মীয়-স্বজনদের রিকোয়েস্ট রাখাও সম্ভব হয় না।

অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট পরবর্তী সময়ের অবাধ স্বাধীনতা তাফসির মাহফিল আয়োজনকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। তার একটি প্রেশার, অন্যদিকে শায়েখ মিজানুর রহমান আজহারী ভাই দেশে না থাকায় আরেকটি চাপ সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

সব মিলিয়ে যথাযথ শারীরিক, মানসিক ও একাডেমিক প্রস্তুতি গ্রহণ করার সুযোগ পাইনি। যার ফলেই মাঝে মধ্যে এমন ত্রুটি, ভুল আমার দ্বারা হয়ে যাচ্ছে। আমি আবারো বলছি, আমি সুস্থ না। অন্যদিকে বাস্তবতার শিকার। যেখানে সুস্থ মানুষের পক্ষেই এতো প্রোগ্রাম, জার্নি করা অসম্ভব হয়ে যায়, সেখানে আমার মতো অসুস্থ ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা কী একটু ভেবে দেখবেন।

আমি আপনাদের কাছে আবারো ক্ষমা চাই এবং এই সিজনে আমার ভুলভ্রান্তিগুলো দিয়ে প্রকৃত আমাকে জাজ (বিচার) কইরেন না দয়া করে। আমি কথা দিচ্ছি, পরবর্তী বছরগুলোতে পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ও আমার যথাযথ ট্রিটমেন্ট নিয়ে তাফসির মাহফিলে অংশগ্রহণ করবো ইনশা আল্লাহ। সঙ্গে গণহারে দাওয়াত নেওয়া বন্ধ করে দেবো। বিশেষ দোয়াপ্রার্থী আমির হামজা।”

প্রসঙ্গত, ওয়াজ মাহফিলে ভারতের দক্ষিণী অভিনেত্রীর সৌন্দর্যের উদাহরণ দিতে গিয়ে আমীর হামজা রাশমিকাকে বিশ্বের অন্যতম সুন্দরী হিসেবে আখ্যা দেন। যদিও তিনি রেফারেন্স দিয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের।

ওয়াজ মাহফিলের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আমির হামজা বলছেন- এখন বিশ্বে যত সুন্দর মানুষ আছে; আপনারা ইন্টারনেট ঘাঁটবেন, ১৫৭টি রাষ্ট্রের মধ্যে চেহারার কাটিংয়ে ১ নম্বরে রয়েছেন রাশমিকা মান্দানা। নাম শুনেছেন? চেহারার কাটিংয়ে এখন ১ নম্বরে আছেন। এই মহিলার দিকে একটু আল্লাহর নাম নিয়ে তাকাবেন। দেখেন তো কী সুন্দর করে আল্লাহ তাকে বানিয়েছেন। এর চেয়ে শত গুণে সুন্দর ছিলেন আমাদের আদি মাতা হাওয়া (আ.)।

ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়