ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১০ জুলাই ২০২৫ ||  আষাঢ় ২৬ ১৪৩২

নলছিটিতে পানি উঠছে না নলকূপে

অলোক সাহা, ঝালকাঠি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ১৮ জুন ২০২৫   আপডেট: ১৮:৩৬, ১৮ জুন ২০২৫
নলছিটিতে পানি উঠছে না নলকূপে

বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ঝালকাঠির নলছিটিতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পৌরসভা এলাকা ও বেশিরভাগ ইউনিয়নে অকেজো হয়ে পড়ে আছে হাজারের বেশি গভীর নলকূপ। পানির চাহিদা মেটাতে পৌরসভার দুটি পানি সাপ্লাই ইউনিট থাকলেও তাদের পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন নয়। এ কারণে পানি তুলতে সাবমারসিবল পাম্পের দিকে ঝুঁকছেন বাসিন্দারা।

গ্রাহকদের অভিযোগ, সকাল-সন্ধ্যা প্রতিদিন দুইবার পানি সরবরাহ করার কথা থাকলেও নিয়ম মানছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার নান্দিকাঠি এলাকার সারফেস ওয়াটার টিটমেন্ট প্লান্ট সুগন্ধা নদীর পানি শোধনাগারে পরিষ্কার করে পরিবেশন করবে, কিন্তু সেই পানির সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে কাঁদা-ময়লা। এতে সাপ্লাইয়ের পানির সংযোগ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না পৌরবাসী। এমতাবস্থায় তীব্র পানি সংকটের আছেন উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ২ লাখ মানুষ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে যেখানে মাটির ৭০০-৮০০ ফুট গভীরে মিলত বিশুদ্ধ পানি, এখন তা এক হাজার ফুট গভীর থেকেও তোলা যাচ্ছে না। পুকুর ও খালের দূষিত পানি ব্যবহার করায় পাল্লাদিয়ে বাড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ।

নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গত এক সপ্তাহের তথ্যে জানা গেছে, হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়ে পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে উপজেলার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দপদপিয়া ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নলকূপগুলোতে পানি উঠছে না। যাদের আর্থিক সচ্ছলতা রয়েছে তারা সবাই সাবমারসিবল বসিয়ে পানি তুলছেন। দরিদ্র মানুষজন কলস ও বালতি নিয়ে সাবমারসিবল পাম্পে ভিড় করেছেন পানি নিতে।

নলছিটি পৌরসভার মালিপুর এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “আগে মাটির ৭০০ থেকে ৮০০ ফুট গভীরে পানি মিলত। এখন এক হাজার ফুট গভীর থেকেও পানি তোলা যাচ্ছে না। দিন দিন যেন মাটির গভীরে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি মানসম্মত না। পানিতে কাদা ও ময়লা থাকে।”

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমাতে উপজেলার নাচনমহল ও মোল্লারহার ইউনিয়নের ১২৫৭টি পরিবারকে উপকূলীয় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। এই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজারগুলোতে ৩ হাজর লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পূর্ণ ১৮টি কমিউনিটি টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।

নান্দিকাঠি এলাকার গৃহবধূ রহিমা বেগম বলেন, “নলকূপে পানি না উঠায় আমরা পুকুর ও খালের পানি রান্না-খাওয়ার জন্য ব্যবহার করি। গত এক মাসে শিশুরা ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছি।”

নলছিটি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৗশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আবদুস সোবাহান বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এ কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা প্রায়ই গভীর নলকূপে পানি উঠেছে না এমন অভিযোগ পাচ্ছি। নির্বিঘ্নে পানি পেতে হলে সাবমারসিবল বসাতে হবে। বর্ষা মৌসুমে এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হবে।”

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার এরশাদুজ্জামান মৃদুল বলেন, “অপরিকল্পিত নলকূপ স্থাপনের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সাপ্লাই, বৃষ্টির পানি ও পুকুর জলাশয়ের পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে বিকল্প ব্যবহারে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।”

নলছিটি উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মোট জনসংখ্যা ২ লাখ। এই জনসংখার প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ সরকারিভাবে বসানো চার হাজার ও  ব্যক্তি উদ্যোগে বসানো ৬ হাজার গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করেন। বাকিরা পৌর সাপ্লাই, নদী, খাল ও পুকুরের পানি ফুটিয়ে পান করেন।

ঢাকা/মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়