ঢাকা     সোমবার   ১৪ জুলাই ২০২৫ ||  আষাঢ় ৩০ ১৪৩২

ভাঙন প্রবণ এলাকায় বালুমহাল ইজারার উদ্যোগ নিয়ে শঙ্কা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১৯ জুন ২০২৫   আপডেট: ১১:১২, ১৯ জুন ২০২৫
ভাঙন প্রবণ এলাকায় বালুমহাল ইজারার উদ্যোগ নিয়ে শঙ্কা

পদ্মা নদী থেকে বালু তোলার জন্য ড্রেজিং প্রকল্প

একদিকে পদ্মা নদীর ভাঙন ঠেকাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বাঁধ নির্মাণ করছে সরকার, অন্যদিকে শরীয়তপুরে ভেদরগঞ্জের কাঁচিকাটা এলাকায় পদ্মা নদীতে বালুমহাল ঘোষণা করে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। 

ভাঙন প্রবণ এলাকা হওয়ায় এখান থেকে বালু উত্তোলন করা হলে ব্যাপক নদী ভাঙনের আশঙ্কা করছেন তারা। তাই প্রশাসনের এমন উদ্যোগের প্রতিবাদে বিক্ষোভে নেমেছে পদ্মা পাড়ের মানুষ। 

হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ছাড়া বালু মহাল ঘোষণার ব্যাপারে সতর্ক করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সংস্থাটি বলছে, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন করা হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ভাঙন দেখা দিতে পারে তীরবর্তী এলাকায়। 

অন্যদিকে, উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান নদীভাঙনের জন্য অবৈধ বালু উত্তোলনকে দায়ী করে ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।

জেলা প্রশাসন ও পাউবোও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, গত বছরের মার্চে কাচিকাটা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর ৭৭ নং কাচিকাটা মৌজার ২২ দশমিক ৬৩ একর জমি বালু মহাল ঘেষণার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। ইজারা দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য তালিকাভুক্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বালু মহাল ঘোষণার অনুমতি চেয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। 

এক বছর পর আবার একই এলাকার আরেকটি মৌজায় বালুমহাল ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার খবরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে ভয়াবহ ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের এই প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে পদ্মার তীরবর্তী এলাকার মানুষ গত ৩মে মানববন্ধন, নদীর তীরে অবস্থানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।

শরীয়তপুরের তিনটি উপজেলার মোট ২১টি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। প্রতি বছরই নদী ভাঙনের কবলে পড়ে পদ্মা পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। গত ১০ বছরে নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে এই জনপদের অন্তত ২০ হাজার পরিবার। ভাঙন ঠেকাতে গত ৫ বছরে শরীয়তপুরে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে একাধিক বাধ নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

নদী ভাঙনে গৃহহীন হাসান খান বলেন, “আমি জন্মাইছি এই নদীর পাড়ে কিন্তু এখন নিজের ভিটেমাটির কোনো ঠিক নাই। গত বছরই নদী ভাঙনে আমার বসতঘর চলে গেছে। এখন আবার শুনতেছি এখান থেকে বালু তোলা হবে। এইখানে বালু তুললে আমরা শেষ হয়ে যাব। প্রশাসন কি আমাদের আরেকবার গৃহহীন করতে চায়? এই ইজারা বন্ধ হোক, আমাদের বাঁচতে দিন।”

মনসুর সরদার নামে অপর একজন1 বলেন, “পদ্মা শুধু নদী না, আমাদের জীবন-জীবিকার উৎস। অথচ হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ছাড়াই যেভাবে বালুমহাল ইজারা দেওয়ার চেষ্টা চলছে, তা ভয়ঙ্কর। পানি উন্নয়ন বোর্ড নিজেই বলছে ভাঙনের আশঙ্কা আছে, তাও কেন এমন সিদ্ধান্ত? আমরা উন্নয়নের বিরুদ্ধে না। তবে তা যেন মানবিক ও পরিবেশসম্মত হয়। প্রয়োজনে আমরা আরও আন্দোলনে যাব।”

এ বিষয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তারেক হাসান বলেন, “এলাকাটি ভাঙনপ্রবণ। নদীতে বালু জমে চর তৈরি হয়। যা সরাতে গিয়ে কখনো ভাঙন কমে, আবার কখনো বেড়ে যায়। তাই হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ছাড়া বালু উত্তোলন করলে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের আশঙ্কা থাকে। এজন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বালু কাটার প্রয়োজন।”

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, “বালুমহাল ঘোষণার জন্য পাউবো, পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর ইতিবাচক প্রতিবেদন পেয়েই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নেওয়া হবে।”

এদিকে, সম্প্রতি নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনে এসে, নদীর তলদেশ থেকে বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সেসময় তিনি বলেন, “নদীভাঙনের মূল কারণ নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও অবৈধ বালু উত্তোলন। ড্রেজার চালানোর ফলে পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন বাড়ছে। জেলা প্রশাসনকে ড্রেজার আটক ও মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড নিয়ে অভিযান চালানো হবে।”

পদ্মা নদীতে বালুমহাল ঘোষণা করে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আরো বলেন, “জেলা প্রশাসকের অনুমতি রয়েছে কি না আমরা বিষয়টি দেখব। জেলা প্রশাসক যদি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও জনস্বার্থবিরোধী অনুমতি দিয়ে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/আকাশ/এস


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়