ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বান্দরবানে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তা ঢালাই, কাজের মান নিয়ে উদ্বেগ

বান্দরবান প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৮, ২১ জুন ২০২৫   আপডেট: ১৭:২২, ২১ জুন ২০২৫
বান্দরবানে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তা ঢালাই, কাজের মান নিয়ে উদ্বেগ

বৃষ্টির মধ্যেই চলছে রাস্তা ঢালাইয়ের কাজ

বৃষ্টির মধ্যেই বান্দরবানে দুইদিন ধরে চলছে সড়ক উন্নয়নের আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ জেএসএস গলিতে এই কাজ চলমান রয়েছে, যেখানে একপাশে রয়েছে বান্দরবান সরকারি গার্লস হাইস্কুল এবং অন্য পাশে ট্রাফিক মোড় হয়ে উজানী পাড়ার সংযোগ সড়ক।

দীর্ঘদিন সংস্কারবিহীন এই গলিতে কাজ শুরু হলেও এখন বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই চলায় কাজের গুণগত মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।

আরো পড়ুন:

এলাকাবাসী জানান, গত তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে বান্দরবানে। এমনকি রাতে ভারী বর্ষণে সড়কে পানি জমে থাকলেও শ্রমিকরা থেমে নেই। গতকাল শুক্রবার ও শনিবার (২১ জুন) ভেজা পরিবেশে সকাল থেকে চলছে সিমেন্ট, বালু ও কংক্রিট ঢালাই। তাদের অভিযোগ, প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করাই ঠিকাদারদের মূল লক্ষ্য, তাই প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট অফিসের তথ্য বলছে, বান্দরবান পৌরসভার অধীনে সড়কটির কাজ হচ্ছে। সড়কটি প্রায় ১৫০ মিটার দীর্ঘ। সড়কটিতে আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৬০ লাখ টাকা। কাজটি ইউটিং মং মারমার লাইসেন্সে হলেও প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়ন করছেন সায়ন চৌধুরী নামে আরেক ঠিকাদার। 

স্থানীয় বাসিন্দা মংক্যপ্রু মার্মা বলেন, ‍“এই রাস্তাটি অনেক বছর ধরে সংস্কার করা হয়নি। চলাচলে সাধারণ মানুষদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক দাবির পর,  ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ আসে। আশা করেছিলাম, মানসম্মত কাজ হবে। বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই করে যে কাজ হচ্ছে, তা খুব বেশিদিন টিকবে না।”

অপর বাসিন্দা সুইক্য মং মার্মা বলেন, “মানুষের ট্যাক্সের টাকায় যদি এভাবে কাজ হয়, তাহলে উন্নয়ন না করাই ভালো ছিল। অন্তত টাকাটা অপচয় হতো না।”

স্থানীয় এক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কংক্রিট ঢালাইয়ের জন্য আবহাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টিতে ঢালাই করলে কংক্রিটের অনুপাত নষ্ট হয়, ফলে পরে ফাটল, গর্ত বা দেবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটা ঠিকাদারের প্রকৌশলগত ভুল সিদ্ধান্ত। 

বৃষ্টির মধ্যে ঢালায়ে বিষয়ে প্রকল্পের কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সায়ন চৌধুরী বলেন, “কাজটা ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করতে হবে। না হলে জামানতের টাকাসহ কাজের বিলের সবটাকা আটকে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই বাধ্য হয়েই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই করছি।”

বান্দরবান পৌরসভার অফিসের মাঠে কাজে তদারকির দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী (ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট) সত্যজিত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় ঢালাই করার কথা ছিল না। নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের ফোন পেয়ে এসে দেখি বৃষ্টির মধ্যে কাজ চলছে। স্যারের নির্দেশে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”

বান্দরবান পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া বলেন, “আমাদের ওপর জুন ক্লোজিংয়ের চাপ থাকে, তাই অনেক সময় ঠিকাদারদের কাজ অনুমোদন করতে হয়। তবে বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি আরো বলেন, “গত সপ্তাহেও এ রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে কাজ করার চেষ্টা করেছিল, তখন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারি ছুটির দিন, তাই কাজ করার অনুমতি ছিল না। যদি প্রমাণ হয়, বৃষ্টির মধ্যেই ঢালাই করা হয়েছে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও লাইসেন্সধারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বান্দরবান আবহাওয়া অধিদপ্তরের অফিসার ইনচার্জ সনাতন কুমার মন্ডল জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আজ (শনিবার) সকাল ৯টা পর্যন্ত বান্দরবানে ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। 

ঢাকা/চাইমং/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়