ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কথা অস্পষ্ট, পারেন না লিখতে তবুও দিচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা

পটুয়াখালী (উপকূল) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৪, ৩০ জুন ২০২৫   আপডেট: ১৯:০২, ৩০ জুন ২০২৫
কথা অস্পষ্ট, পারেন না লিখতে তবুও দিচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা

শ্রুতি লেখক রাজিবের (বাঁয়ে) মাধ্যমে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন সিয়াম (ডানে)। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা একজন গার্ড

মুখের ভাষা অস্পষ্ট। কোনো রকম হাটতে পারলেও পারেন না লিখতে। এরপরও নিজের ইচ্ছা শক্তিতে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন এইচ এম সিয়াম (১৮)। পরীক্ষার হলে তাকে শ্রুতি লেখক হিসেবে সাহায্য করছেন দশম শ্রেণির ছাত্র রাজিব। প্রশ্ন দেখে অস্পষ্ট ভাষায় উত্তর দিচ্ছিলেন সিয়াম। সেই উত্তর খাতায় লিখছিলেন রাজিব।

সিয়াম ভালো ফলাফল নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন এমনটি আশা করছেন তার বাবা-মা ও শিক্ষকরা।

আরো পড়ুন:

পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের রহমতপুর এলাকার এনজিও কর্মী ওবাইদুল ইসলামের বড় ছেলে এইচ এম সিয়াম। জন্মের এক বছর পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। এরপর তার স্বাভাবিক চলাফেরা ও কথা বলায় অনেক সমস্যা দেখা দেয়। তাকে সুস্থ করতে অনেক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। 

স্বজনরা জানান, ছোট থেকেই পড়ালেখার প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল সিয়ামের। পরিবারের সহযোগিতা ও নিজের ইচ্ছাশক্তিতে পড়ালেখা চালিয়ে যান তিনি। ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ- ৪.০৭ নিয়ে উত্তীর্ন হন সিয়াম। এবার তিনি দিচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা।

ইসমাইল তালুকদার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি বিভাগে ওই কেন্দ্রেই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন সিয়াম। নিজে লিখতে না পারায় শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করে নিয়েছেন শ্রুতি লেখক। পরীক্ষার হলে সিয়াম অস্পষ্টভাবে উত্তর বলেন আর তা শুনে খাতায় লিপিবদ্ধ করেন আমতলী উপজেলার কুকুয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র শ্রুতি লেখক রাজিব। পরীক্ষা দিতে পেরে উচ্ছ্বসিত সিয়াম। সিনিয়র ভাইকে সহযোগিতা করতে পেরে খুশি রাজিব। 

পরীক্ষার্থী এইচ এম সিয়াম বলেন, “আমার পড়াশুনা করতে অনেক ভালো লাগে। বাবা-মা এবং কলেজের শিক্ষকরা সবাই আমাকে সহযোগিতা করেন। আমার এইচএসসি পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। বাংলা ও ইংরেজি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আমি পড়ালেখা করে যাতে ভালো পর্যায়ে পৌঁছাতে পারি এজন্য সবার কাছে দোয়া চাই।” 

রাজিব বলেন, “আমি সিয়াম ভাইয়ের শ্রুতি লেখক হিসেবে পরীক্ষা দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।”

সিয়ামের বাবা ওবাইদুল ইসলাম বলেন, “সিয়ামকে ঘরে বসিয়ে রাখা কোনো ভাবেই ভালো হতো না। ওর পড়ালেখা করার অনেক ইচ্ছা। শত কষ্ট হলেও আমি ওকে পড়ালেখা করাবো।” 

সিয়ামের মা জয়নব বেগম কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলের বয়স যখন এক বছর তখন সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। ওর হাটা ও কথাবার্তায় সমস্যা শুরু হয়। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। অগের চেয়ে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এখনো তার ওষুধ চলে। আমার ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।” 

ইসমাইল তালুকদার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আবু সালেহ বলেন, “সিয়াম অন্য সব ছাত্রের সঙ্গেই ক্লাস করেছে। আমরা আলাদাভাবে তার খেয়াল রেখেছি। তিনি মেধাবী এবং তার শ্রবণ শক্তি অনেক ভালো। আশা করছি, ভালো রেজাল্ট নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বড় কোনো বিদ্যাপিঠে পড়ালেখা করতে পারবেন তিনি।”

কলাপড়া উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির সহকারী পরিচালক ও ইসলাম তালুকদার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান বলেন, “সিয়ামের পরীক্ষায় কোনো আইনি জটিলতা নেই। তিনি বোর্ড থেকে অনুমতি নিয়ে শ্রুতি লেখকের মাধ্যমে পরীক্ষা দিচ্ছেন।”

ঢাকা/ইমরান/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়