ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সাভারে কিডনি কাণ্ড

প্রেমিকের সঙ্গে ধরা পড়ার পর স্ত্রীর রোষানলে স্বামী

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ২০ জুলাই ২০২৫  
প্রেমিকের সঙ্গে ধরা পড়ার পর স্ত্রীর রোষানলে স্বামী

সাভারের আলোচিত কিডনি কাণ্ডে এবার মুখ খুলেছেন কিডনিগ্রহীতা স্বামী মো. তারেক। তার দাবি, স্ত্রী উম্মে সাহেদীনা টুনি কিডনি দেওয়ার আগে তার কাছ থেকে এক শতাংশ জমি এবং তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলার মালিকানা লিখে নেন।

তারেকের অভিযোগ, কিডনি দেওয়ার পরই স্ত্রীর আচরণ বদলে যেতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে প্রেমিকের সঙ্গে ‘হাতেনাতে’ ধরেন বলেও তিনি দাবি করেন। এরপর থেকেই তারেককে মামলায় জড়িয়ে ‘শাস্তি’ দিচ্ছেন স্ত্রী।  

তারেক জানান, এক শতাংশ জমিসহ তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলার মালিকানা লিখে নিয়ে কিডনি দানে সম্মত হন স্ত্রী উম্মে সাহেদীনা টুনি। এরপরই টুনি জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়। বিষয়টি হাতেনাতে ধরে ফেলার পর স্ত্রীর রোষানলে পরেন তিনি। 

তারেকের বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা। সেখান থেকে পরিবার নিয়ে ঢাকায় এসে বসবাস শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে মালয়েশিয়ায় যান জীবিকার সন্ধানে। সেখান থেকে উপার্জনের টাকা পাঠিয়ে সাভারের কলমায় জমি কেনেন, পরে বাড়ি তৈরি করেন। ২০০৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন টুনিকে। 

তারেক বলেন, “সাভারের কলমা এলাকার এক ঘটক টুনির সন্ধান দেন। আমাদের বাসায় যে খালা রান্না করতেন তিনিও আমাকে বললেন, ‘মামা টুনিকে আমি দেখেছি, অনেক সুন্দরী!’ পরে টুনির খালা-খালু আমাকে এসে দেখে বিয়ের জন্য রাজি হন। আমি টুনিকে না দেখেই আংটি নিয়ে ২০০৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করতে যাই। সে সময় আমার বাড়ি ছিল। কিন্তু টুনিরা কোয়ার্টারে থাকতো। এখন অবশ্য তাদের অনেক টাকা।”

বিয়ের পর কয়েক বছর সংসার ভালো চললেও, তারেকের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। তিনি বলেন, “আমাদের সংসার ভালোই চলছিল। দুজনের সংসারে আসে নতুন মেহমান। কিন্তু আমার জীবনে হঠাৎ নেমে আসে অন্ধকার। দুই বছরের মাথায় আমার কিডনি রোগ ধরা পড়ে। বিদেশ থেকে এসে আমি পোশাক কারখানায় সাপ্লাই ব্যবসা করতাম। তখন আমার টাকা-পয়সা ছিল। আমি ভারতে চিকিৎসা শুরু করলাম। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ডা. বললেন কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। কিন্তু সেসময় আমার অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। বাসা ভাড়া যা পেতাম তাই দিয়ে সংসার চালিয়ে চিকিৎসা করতাম। পরে টুনি আমাকে কিডনি দিতে রাজি হয়। কিন্তু বিনিময়ে আমার বাড়ির দ্বিতীয় তলার মালিকানা দাবি করে। তখন আমাদের সম্পর্ক ভালো ছিল, তাই নির্দ্বিধায় এক শতাংশ জমিসহ দ্বিতীয় তলা লিখে দিয়েছিলাম। পরে আমরা ভারতে যাই। সেখানেই আমার কিডনি প্রতিস্থাপন হয়।’’

‘‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারিনি। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ খেয়ে আমি আমার সক্ষমতা হারাতে থাকি। ফলে ধীরে ধীরে টুনির সঙ্গে আমার সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। এরপর সে প্রবেশ করে টিকটক জগতে। তার চরিত্রের সমস্যা তখন থেকেই আমার চোখে ধরা পড়ে। তারপরও আমি কষ্ট করে মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু যেদিন আমার বাড়ির ভাড়াটিয়ার সাথে এক রুমে হাতেনাতে তাকে ধরি সেদিন আর সহ্য করতে পারিনি। আমি থাপ্পড় দিয়ে সেই ঘর থেকে টুনিকে নিয়ে আসি। এ ঘটনা  ভাড়াটিয়ারা সবাই দেখেছে,” বলেন তারেক।

স্ত্রীর পরকীয়া ফাঁস হওয়ার পর উল্টো তারেকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ওঠে। তারেক বলেন, “হাতেনাতে ধরার পর আমার শাস্তি শুরু হয়। আমাকে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। জেল থেকে বের হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। হাসপাতালে ভর্তি হই। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে শুনি টুনি আমার বিরুদ্ধেই পরকীয়া আর অনলাইন জুয়ার মিথ্যা গল্প সাজিয়েছে।”

তারেকের বাড়ির সাবেক ভাড়াটিয়া মো. হৃদয় খান বলেন, ‘‘তারেক যা বলেছেন সত্যি কথা বলেছেন। আমি তার বাড়িতে ভাড়া ছিলাম।’’ 

তার বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তারেক বলেন, “টুনি বিভিন্ন মাধ্যমে বলেছে, আমি শারীরিকভাবে অক্ষম। এই অবস্থায় অন্য নারীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক রাখার ক্ষমতা থাকার কথা নয়। তাহলে আমি কীভাবে পরকীয়ায় জড়ালাম?’’ 

‘‘আমার ফোন, কাপড়চোপড় সব কিছু ওই বাড়িতে রেখেই আমার ভাইয়ের বাসায় আছি। আমার বাড়ি ভাড়ার সমস্ত টাকা টুনি নিয়ে যাচ্ছে। আমি ঠিকমতো ওষুধ খেতে পারছি না। আমি আমার বাড়ির অংশের ভাড়া চাই, যাতে আমার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারি। টুনির সাথে আমার এখনও বিচ্ছেদ হয়নি।’’

বিষয়টি অমানবিক বলে মনে করেন তারেক।

উম্মে সাহেদীনা টুনি অবশ্য তারেকের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে  উল্টো অভিযোগ এনেছেন। তার ভাষ্য, কিডনি দিয়ে স্বামীর জীবন বাঁচানোর পর তারেক জড়িয়ে পড়েন পরকীয়া এবং অনলাইন জুয়ায়। এমনকি তাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন তারেক। 

ঢাকা/সাব্বির//

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়