আত্মহত্যার চিরকুট হাতে এলজিইডি অফিসে নারী
দিনাজপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে চিরকুট হাতে কল্পনা বেগম
মিথ্যা অপবাদের বিচার চেয়ে আত্মহত্যার চিরকুট হাতে নিয়ে দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ে সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কল্পনা বেগম। সরকারি রাস্তার মাটি কাটার কাজ দিতে চেয়ে, না দিয়ে উল্টো তাকে চরিত্রহীন অপবাদ দেয়ার অভিযোগ করেছেন প্রকৌশলী আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে। মিথ্যা অপবাদ সহ্য না করতে পেরে ওই প্রকৌশলীকে দায়ী করে আত্মহত্যার চিরকুট হাতে নিয়ে উপজেলা চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এই অসহায় হতদরিদ্র নারী।
রবিবার (২০ জুলাই) দুপুরে মিথ্যা অপবাদের বিচার চেয়ে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ে চিরকুট হাতে নিয়ে কল্পনা বেগমকে ঘুরতে দেখা গেছে।
হিলি পৌরসভার দক্ষিণ বাসুদেব মাঠপাড়া এলাকার স্বামী পরিত্যক্ত কল্পনা বেগম। মা-বাবা নেই, ছেলে নেই। একটি মেয়ে আছে, তারও বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে সেলাই মেশিনের কাজ করে চলেন তিনি। বর্তমান সেলাই মেশিনে তেমন কাজ পাওয়া যায় না। তাই খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তার।
গত ১০ থেকে ১২ দিন আগে কল্পনা বেগম জানতে পারেন, উপজেলা এলজিইডি অফিসে সরকারি রাস্তায় মাটি কাটার কাজে মহিলা শ্রমিক নেয়া হবে। এমন খবরে তিনি ছুটে যান উপজেলার প্রকৌশলী আহসান হাবীবের কাছে। প্রকৌশলী তাকে কাগজপত্র জমা দিতে বলেন এবং কল্পনা বেগম কাজের আশায় কাগজপত্র জমা দেন। আবার ইউএনও বরাবর এই কাজের জন্য আবেদনও করেন তিনি। সেই আবেদনে ইউএনও সুপারিশও করেন। শেষমেশ প্রকৌশলী তাকে কাজ দেননি। কল্পনা বেগমের চরিত্র খারাপ এই মর্মে কাজ দেয়া যাবে না— এমন অপবাদ দিয়ে তাকে অফিস থেকে বের করে দেন প্রকৌশলী।
কাজ না দিলেও দিয়েছেন মিথ্যা অপবাদ। মিথ্যা অপবাদের প্রতিবাদে এবং সুবিচারের আশায় প্রকৌশলীকে দায়ী করে আত্মহত্যার চিরকুট হাতে ঘুরছেন অসহায় কল্পনা বেগম।
ভুক্তভোগী কল্পনা বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘একটা কাজের আশায় ইঞ্জিনিয়ার অফিসে আসছি। কিন্তু কাজ তো দুরের কথা, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তার অফিস থেকে আমাকে বের করে দিয়েছেন। আমি নাকি খারাপ, কেন তিনি আমাকে খারাপ বললেন? প্রমাণ দিতে হবে, তা না হলে তাকে দায়ী করে চিরকুট লিখেছি, আমি আত্মহত্যা করব।’’
কাজ দিতে চেয়ে, কাজ না দিয়ে কল্পনা বেগমকে মিথ্যা অপবাদ কেন দিয়েছেন— জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলা প্রকৌশলী আহসান হাবীব রাইজিংবিডি-কে বলেন, ‘‘আমি অফিসে নেই, ছুটিতে আছি। আগামীকাল অফিসে আসুন সব বলব।’’
এ বিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় রাইজিংবিডি-কে বলেন, ‘‘এলজিইডি অফিস তার বিষয়ে দেখবে। যাছাই করে তিনি যদি কাজ পাওয়ার যোগ্য হয়, তাহলে পাবেন।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘ওই নারী যেন আমার অফিসে আসেন, তাকে সরকারিভাবে খাদ্য সামগ্রী দেয়া হবে।’’
ঢাকা/মোসলেম/বকুল